বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে আঁকড়ে ধরার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ঠুর বেড়াজাল দিয়ে একনায়কতন্ত্র ও একদলীয় শাসনের মাধ্যমে জনগণকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করে তার সমাধির ওপর বর্তমানে একটি বিভীষিকাময় শাসন জারি রয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নের নামে শোষণ, বঞ্চনা, লুটপাট ও অত্যাচারের এক দুঃসহ নব্য ফ্যাসিবাদ আজ জনগণের বুকের ওপর চেপে বসেছে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এখন আওয়ামী নব্য নাৎসিবাদের উপাসকে পরিণত হয়েছেন। এই ভয়াবহ দুঃসময়ে গণতন্ত্র দিবসে মাহফুজ আনাম নিজের লেখা একটি নিবন্ধ ছেপেছেন। যাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নির্জলা মিথ্যাচার, বিভ্রান্তিকর তথ্য, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অসংলগ্ন মতামত তুলে ধরা হয়েছে।’
বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের গণতন্ত্র ধংসের প্রধান কুশীলবদের অন্যতম হোতা এবং সেনা সমর্থিত মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত মাহফুজ আনাম তাঁর এই নিবন্ধে খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরাসরি ও ইঙ্গিতে যে মন্তব্য করেছেন তাতে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে তিনি ইনিয়ে-বিনিয়ে বারবার বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। যা হলুদ সাংবাদিকতা ও বর্তমান সরকারের নির্লজ্জ স্তুতিরই সমতুল্য। মাহফুজ আনাম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে তাঁর প্রবন্ধে যা লিখেছেন, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিষদবর্গের হাইপার-প্রপাগাণ্ডা ও কলুষিত মিথ্যাচারের প্রতিধ্বনি মাত্র। মিথ্যা বানোয়াট গল্প সাজিয়ে সংবাদ পরিবেশনের দায়ে বারবার ক্ষমা চেয়ে এখন সরকারের কাছে সাধু সাজার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তিনি। তাঁর লেখালেখির ভিশন-মিশন হলো বিএনপির বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কাহিনী রচনা করে তা প্রকাশ করা। ভয়ে হোক বা উচ্ছিষ্ট ভোগের ইচ্ছেয় হোক- গণতন্ত্রহীন ও বেপরোয়া আচরণে লিপ্ত আওয়ামী লীগ সরকারকে খুশি করাই এখন তাঁর আরাধ্য।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহমুজ আনামের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, “নিজেকে কথিত ‘প্রতিষ্ঠানতুল্য সাংবাদিক’ দাবি করা সাংবাদিকতার ‘এথিকস’ শেখানো, কে এই মাহফুজ আনাম? কী তাঁর আমলনামা? গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা সাজা এই মুখোশধারী মাহফুজ সাহেবের বাবা ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভায় দীপ্তিমান সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক-সম্পাদক সর্বজন শ্রদ্ধেয়। সেই স্মরণীয় আবুল মনসুর আহমদের নাম তিনি ভূলুণ্ঠিত করছেন।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণকারীদের মাধ্যমে সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তি তাদের প্রথম লক্ষ্য হাসিল করে। সেই লক্ষ্য হাসিলে পুরোধা ছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার নিয়ে সেদিন তিনি উল্লাস করেছিলেন। এ সরকার আনার পেছনে নিজের কৃতিত্ব নিয়ে সগর্বে কলাম লিখেছিলেন-‘দুই নেত্রীকে বিদায় নিতে হবে’ শিরোনামে। ডেইলি স্টার গ্রুপের পত্রিকায় গণতান্ত্রিক সরকারের পরিবর্তে সেনাসমর্থিত অগণতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসনকে স্বাগত জানিয়ে প্রকাশ করা হয়েছিল একটির পর একটি নিবন্ধ। পুরো সময়টা তাঁরা গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে শুধুই গালমন্দ করে মনগড়া নিবন্ধ লিখে গেছেন।”
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘মাইনাস ফর্মুলায় দেশকে রাজনীতিশূন্য করতে মাহফুজ আনাম মিথ্যা, অসত্য ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করে রাজনীতিকদের গ্রেপ্তারে পটভূমি রচনার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তৎকালীন অবৈধ সরকার গণমানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এক বছরের বেশি সময় কারাবন্দি করে রাখে। এ দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানকে হত্যার চেষ্টা করেছে। নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। আজও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। এর জন্য দায়ী ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা। মাহফুজ আনামদের চোখে সব দোষ রাজনীতিকদের।’