খুব বেশি হলে আর মাস তিনেক। চলে আসবে করোনা ভ্যাকসিন। এমনই আশা করছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। রাশিয়ার টিকা হয়তো তারও আগে চলে আসতে পারে দেশের বাজারে। কিন্তু তা সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছবে কবে? কবেই বা শুরু করা যাবে গণটিকাকরণ? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশাসনের অন্দরে। এই পরিস্থিতিতে একটু এগিয়েই ভাবছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে কলকাতা পুরসভা। ভ্যাকসিনে আইসিএমআরের অনুমোদন মিললেই শহরবাসীর টিকাকরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুরসভা। একেবারে বিনামূল্যে। পুর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দেওয়া অন্য সব টিকার মতোই। একই মডেলে জেলার বাসিন্দাদেরও করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে রাজ্য প্রশাসনের। টিকা নাগরিকদের অধিকার। কেউ তা থেকে বঞ্চিত হবেন না। প্রথম থেকেই অবস্থান স্পষ্ট করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। করোনা পরীক্ষার কিট নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর টিকার ব্যাপারে সাবধানে পা ফেলতে চাইছে মোদি সরকারও। জানানো হয়েছে, ভ্যাকসিন কোনও রাজ্যকে আলাদা করে কিনতে হবে না। সরাসরি উৎপাদক সংস্থার থেকে কিনে তা বণ্টন করবে কেন্দ্র। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের এদেশের অংশীদার সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়াও জানিয়েছে, গেটস ফাউন্ডেশনের সাহায্য মেলায় টিকার প্রতিটি ডোজের দাম হবে প্রায় ২৪০ টাকা। সব ডোজ মিলিয়ে সম্ভাব্য দাম প্রায় ১,২০০-১,৩০০ টাকা।
এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছে কলকাতা পুরসভা। শুরু হয়েছে আলাপ-আলোচনা। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার কলকাতায় নিম্নমুখী। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে এখনও শীর্ষেই রয়েছে মহানগরী। বৃহস্পতিবার শহরে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২৩৮ জন। রাজ্যের মধ্যে সর্বাধিক। এদিন নতুন করে ২৩ জনের দেহে করোনা ধরা পড়েছে। এর প্রধান কারণ অবশ্য জেলাগুলি থেকে আসা রোগীদের চাপও। সেই কারণেই টিকা আবিষ্কারের সঙ্গেই দ্রুত টিকাকরণ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে পুর-কর্তৃপক্ষের। একাজে ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর, পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এর জন্য যে বিষয়টি পুরসভাকে প্রধানত ভাবাচ্ছে, তা হল খরচ। কেন্দ্রীয় সরকার দামে কিছু অন্তত ভর্তুকি দেবে বলেই আশাবাদী পুর আধিকারিকরা। যদি তা না হয়, সেক্ষেত্রে কত খরচ পড়বে, সেব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের অনুমতি অবশ্য লাগবেই। কারণ, কোভিড মোকাবিলায় পুরো পরিকাঠামোই তৈরি করেছে তারা। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘কলকাতা পুরসভা নাগরিকদের ভ্যাকসিন দিতে চায়। শহরবাসীর জীবন সুরক্ষিত করার দায়িত্ব আমাদের। তবে কোভিড-১৯ মোকাবিলার বিষয়টি স্বাস্থ্যদপ্তরের আওতাধীন। তারা অনুমোদন দিলে আমরা টিকাকরণে নামব।’ উল্লেখ্য, গত ১৭ মার্চ কলকাতায় প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান মেলে। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক আমলার ছেলে সংক্রমণের শিকার হন। সেই থেকে শুরু। একটা সময় কলকাতায় এত সংখ্যায় করোনা রোগীর সন্ধান মিলছিল, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার বিশেষ দায়িত্ব দেন স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করে নানা ধরনের পরিকল্পনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও মাইক হাতে পথে নেমে মানুষকে বারবার সচেতন করেছেন। কিন্তু, আশপাশের জেলা থেকে রোগীরা কলকাতার নার্সিং হোম-বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ভর্তি হওয়ার কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরে কলকাতা সহ চার জেলাকে নিয়ে একটি ক্লাস্টার বানিয়ে বিশেষ অভিযান শুরু করে নবান্ন। এরপর কলকাতায় নামতে শুরু করে সংক্রমণের গ্রাফ। ডিসেম্বরের মধ্যেই ভ্যাকসিন আসার সম্ভাবনা যথেষ্ট। সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেই ভ্যাকসিনের চাহিদা নিয়ে অঙ্ক কষছে পুরসভা। বিনামূল্যে টিকাকরণ সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু সকলের কাছে কীভাবে সেই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া যায়, তা নিয়ে আরও ভাবনাচিন্তা চালাচ্ছেন পুর আধিকারিকরা। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জেলাগুলিতেও বিনামূল্যে টিকা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। তবে জেলায় সংক্রমণ ব্যাপক আকার না নেওয়ায়, এখনও অগ্রাধিকারের কথা ভাবা হচ্ছে না।