ব্রিকস সদস্যপদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চাইলে পাবো না, সে অবস্থা না। প্রত্যেক কাজেরই একটা নিয়ম থাকে। আমরা সেটা মেনে চলি। ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে কাউকে তিনি বলেননি বলেও জানিয়েছেন।দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলন নিয়ে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রত্যেক কাজেরই একটা নিয়ম থাকে। আমরা সেটা মেনে চলি। ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে কাউকে বলিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারি শ্যামল দত্ত প্রশ্ন করেন, ‘ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে আমি জানতে চাই, যেহেতু এটা নিয়ে কিছু আলোচনা-সমালোচনা চলছে। আমরা কি আদৌ আবেদন করেছিলাম? বা আবেদন করার কোনো পদ্ধতি আছে কি না, বা আমরা কি চেয়েছিলাম কি না ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য।’প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চাইলে পাব না, সে অবস্থাটা আর নেই। কিন্তু প্রত্যেক কাজের একটা পদ্ধতি আছে। একটা নিয়ম আছে। আমরা সেটা মেনেই চলি।’তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ হলো, তিনি আমাকে বললেন যে ব্রিকস সম্মেলন করব। সে সময় তিনি জানালেন যে তারা কিছু সদস্য বাড়াবেন। আমাদের মতামত জানতে চাইলেন।”আমি বললাম এটা খুবই ভালো হবে। ব্রিকস যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন থেকেই এই পাঁচ দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে আমার ভালো যোগাযোগ ছিল এবং আছে। আমরা যখন শুনলাম ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হচ্ছে, আমাদের আগ্রহ সেটার দিকে বেশি ছিল। সেখানে আমরা যুক্ত হতে চেয়েছিলাম। এটা যখন থেকে তৈরি হয়, তখন থেকে আমাদের এটার প্রতি আগ্রহ ছিল,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ব্রিকস থেকে প্রথম থেকেই আমাদের বলেছিল যে তারা ধাপে ধাপে সদস্য নেবে। তারা ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে সদস্য নেবে এবং পর্যায়ক্রমে সদস্য সংখ্যা বাড়াবেন। কিন্তু ব্রিকসে এখনই সদস্যপদ পেতে হবে, সে ধরনের কোনো চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল না। সে রকম কোনো চেষ্টাও আমরা করিনি।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে আমার সঙ্গে সব রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধানের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমরা কিন্তু কাউকে বলতে যাইনি আমাদের এখনই মেম্বার করেন। আমরা জানি যে প্রথমে কয়েকটা দেশ হবে এবং এটা আমাকে প্রেসিডেন্ট লাঞ্চের সময় বলেছেন। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট এবং নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সে সময় আলোচনা হয় যে আমরা এই কয়জনকে নেব। পরে ধাপে ধাপে আমরা সদস্য সংখ্যা বাড়াবো।’প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখন আমাদের অপজিশন থেকে খুব হতাশ যে আমরা সদস্যপদ পাইনি। বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না এটা ঠিক না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের যে মর্যাদা আমরা তুলে ধরেছি, সেখানে আমাদের সে সুযোগ আছে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করেছি। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। সেইসঙ্গে আমাদের সরকারের আমলে মানুষের গড় আয়ুও বেড়েছে। আমরা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের মানুষকে অভিশাপমুক্ত করেছি। তিনি বলেন, দক্ষিণের দেশসমূহের উপর আরোপিত সিদ্ধান্ত, বিভাজনের নীতিকে না বলার এখনই সময়। সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে।তিনি বলেন, সব ধরনের হুমকি, উসকানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলার উপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণের দেশসমূহের উপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্তের কারণে আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে রাজি নই। সর্বজনীন নিয়মের নামে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অসম নীতিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি দক্ষিণের দেশসমূহকে আহ্বান জানিয়েছি।
সফরের মূল আলোচনার বাইরে ইন্দোনেশিয়া, বেলারুশসহ বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের এই সফরটা অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল বাংলাদেশের জন্য। যখন সারাবিশ্ব স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশনের নামে নানা ঝামেলায়, সেখানে একটা নতুন দুয়ার খুলে গেছে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু সম্প্রসারণ করার জন্য সেটাই আমি মনে করি।বিপদজনক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্পদ অপচয় না করে বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের জন্য পণ্য ও পরিষেবা প্রদানের জন্য আহ্বান সম্মেলনে জানানো হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে গত ২২ আগস্ট জোহানেসবার্গের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।এর বাইরে দূত সম্মেলন, বিজনেস সামিট, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া সংবর্ধনাসহ বেশ কিছু কর্মসূচিতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে রোববার (২৭ আগস্ট) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ব্রিকসের ১৫তম ঐতিহাসিক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। কোভিড-১৯ মহামারি এবং পরবর্তী বিশ্বব্যাপী বিধিনিষেধের পর এটিই প্রথম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন যা সশরীরে আয়োজিত হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সম্মেলনে যোগ দেন।