সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আজ সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কমিটির সদস্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল এসএম সাজ্জাদ হোসেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রতিবেদন জমা দিতে সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান কমিটির প্রধান। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করে কারণ, উৎস এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয়সহ সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে তদন্ত কমিটিকে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে এসেছে। রিপোর্টে কি আছে আমরা এখনও দেখিনি। …আমাদের সচিব মহোদয় এগুলো বিশ্লেষণ করে যেখানে যেটা প্রয়োজন সেই অনুযায়ী কাজ করবেন। মন্ত্রী বলেন, আপনারা নিশ্চয় জানেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এটার পুলিশি তদন্ত চলছে। সে কারণে আমরা প্রকাশ্যে কিছু জানাতে পারব না। আমরা আদালতকে এটার সম্পর্কে জানিয়ে দেব, আদালত মনে করলে এটাকে আমাদের কাছ থেকে অফিসিয়ালি নিয়ে যাবেন। আদালত তদন্তের জন্য হয়ত এটা নিয়েও নিয়ে পারেন… এটা আদালতের এখতিয়ার। তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের নামে অভিযোগ আসবে’ তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলে আশ্বাস দেন কামাল। সিনহা হত্যার ঘটানাটি ‘পরিকল্পিত’ ছিল কি না- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তদন্ত রিপোর্ট আমার কাছে মাত্র এলো। এর ভেতর কী লেখা আছে, কী উল্লেখ আছে আমরা তো জানি না কিছু। আমরা বের করে নেই, আমরা এগুলো স্টাডি করি, তারপরে আপনাদের জানাতে পারব। তদন্ত প্রতিবেদন কী সুপারিশ এসেছে, সেই প্রশ্নে কামাল বলেন, আমরাতো এখনো দেখিনি। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য কি উদ্যোগ নিয়েছেন- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেখুন, দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আমরা মনে করি এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক। কেন ঘটেছে, কীভাবে ঘটেছে এগুলোর পুরোপুরি বিশ্লেষণ এখানে (প্রতিবেদনে) রয়েছে, সেগুলো আমাদের স্টাডি করতে হবে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে, সবাই সজাগ রয়েছে, আমরা মনে করি এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে আমরা সবাই সজাগ রয়েছি। সিনহার হত্যাকে কেন্দ্র করে দুই বাহিনীর মধ্যে ‘গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে’- একজন সাংবাদিকের এমন কথায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই বাহিনীর মধ্যে গুজব ছড়িয়ে এদেরকে অসস্তুষ্ট করবে- এ ধরনের উপাদান আমরা পাইনি। আমরা মনে করি, চমৎকার একটি পরিবেশ রয়েছে, আমরা দেখেছি পুলিশ প্রধান ও সেনাবাহিনীর প্রধান দুইজনে মিলে কক্সবাজারে গিয়েছেন, তারা ব্রিফ করেছেন। কাজেই দুই বাহিনীর ভেতরে ‘মতপার্থক্য রয়েছে’- এগুলো সত্য নয়। চমৎকার পরিবেশ রয়েছে, দুই বাহিনী একসাথে কাজ করছে। সিনহার বোনের দায়ের করা হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ থাকার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ তার ওপর নির্যাতন করার অভিযোগ করছেন– এরকম একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রদীপকে নির্যাতনের অভিযোগ সঠিক কি না- সেই প্রশ্নও করা হয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। জবাবে কামাল বলেন, “ভিডিও কোথা থেকে কী হচ্ছে আমরা সেগুলো নজরে আনি না। তথ্যভিত্তিক যেসব সংবাদ আমাদের কাছে আসে, সেগুলোই আমরা নজরে আনি, সেগুলোই আমরা গ্রহণ করি। তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৬৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জবানবন্দি নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এই ঘটনাটি কোনোভাবেই তাদের কাজকে ম্লান করে দেবে না।’ গত ৩১ জুলাই রাতে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গত ১ আগস্ট চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই কমিটির প্রধান করা হয় চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। সিনহার নিহতের ঘটনাটি সরেজমিন তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উৎস, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয়সহ সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে সুস্পষ্ট মতামতসহ চিঠি পাওয়ার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সাত কার্যদিবস শেষ হওয়ার আগেই গত ১০ আগস্ট কমিটি আরও সাত কার্যদিবসের সময়ের আবেদন করে। এর পর সেই তারিখ পিছিয়ে ২৩ আগস্ট করা হয়েছিল।