বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ও সমস্যার গভীরতার প্রেক্ষিতে ‘অংশগ্রহণমূলক কৌশল’ প্রণয়নে অংশিজনসহ বৃহত্তর মতৈক্য স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব গণমাধ্যমে নিম্নোক্ত বিবৃত প্রদান করেন।রাজনৈতিক বিবেচনায় অপরিণামদর্শী মেগা প্রকল্প গ্রহণ, দুর্নীতি, অপচয় ও অর্থপাচারে মধু লোভী কার্যক্রম (রেন্ট সিকিং) এবং সরকারের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতাহীন দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতা আজকের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। ফলে দেশকে ঋণের জালে আবদ্ধ করেও সরকার সংকটের সমাধান দিতে পারবে না।
বাংলাদেশে স্বল্প সময়ের মধ্যে এবং দ্রুত হারে রিজার্ভ কমে যাওয়া বড়ই উদ্বেগের বিষয়। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেও কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না। শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে বা বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়ে বা জোড়াতালি দিয়ে এই সংকটের সমাধান হবে না। শুধু সরকার পরিবর্তন নয়- গোটা শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন করেই এই সংকটের সমাধান খুঁজতে হবে। এই ধরনের জাতীয় সংকট জাতীয়ভাবে মোকাবিলা করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বৈদেশিক ঋণ বাংলাদেশের আর্থিক বাস্তবতা মোকাবিলা করার জন্য যথোপযুক্ত নয়। এর জন্য রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে অর্থবহ পরিবর্তন আনতে হবে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক এমনভাবে বিধি-বিধান তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, যাতে সংকটাপন্ন দেশসমূহের দুর্বলতা এবং ব্যর্থতা সুযোগে তারা নিজস্ব মনোভাব ও চিন্তাধারা বিশেষ করে অর্থনীতি ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দিতে পারে।উল্লেখ্য, আইএমএফ বেইলআউট এর মত কর্মসূচিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করলেও ভুখা নাঙ্গা মানুষের খাদ্য ভর্তুকি বা সার বীজ কীটনাশক ঔষধে কোন ভর্তুকি দিতে উৎসাহী হয় না। ঋণ দাতারা তাদের সুদের হার ও ঋণ ফেরত পাওয়া নিয়েই উদ্বিগ্ন থাকে, সংকট বা দারিদ্র দূরীকরণের জন্য নয়।
সারাবিশ্বে বহু উন্নয়ন মডেল রয়েছে, একেক দেশের সাথে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যও রয়েছে। সব দেশে এক ধরনের মডেল গ্রহণযোগ্য নয়।তাই বাংলাদেশে উদ্ভূত অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নে, আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণে, দারিদ্র ও অসমতা দূরীকরণে এবং সামাজিক নীতি কৌশল প্রণয়নে অংশিজনসহ বৃহত্তর ঐকমত্য প্রয়োজন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল, প্রযুক্তিবিদ, অর্থনীতিবিদ, কৃষিবিদ, ব্যবসায়ী সংগঠন সমূহের প্রতিনিধি, শিল্প কল -কারখানার প্রতিনিধি, ব্যাংকার সংগঠনের প্রতিনিধি এবং শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবীদের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ‘অংশীদারিত্বের উন্নয়ন মডেল’ প্রবর্তন করতে হবে।এ লক্ষ্যে সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।