কিং অব রোমান্স। বলিউড বাদশাহ। বক্স অফিস কিং। কিং খান। যে কোনো একটি নাম শুনলেই সবাই বলে দিতে পারবেন কার নাম বলা হচ্ছে। শাহরুখ খান। সুপারস্টার। আজ তার জন্মদিন। কিন্তু গেল বার প্রথম নিজের জন্মদিনে ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য তাকে দেখা যায়নি মান্নাতের ব্যালকনিতে। দুই হাত প্রসারিত করে ভক্তদের ভালোবাসার জবাব দেওয়ার সেই পরিচিত দৃশ্য দেখতে না পাওয়াটা নিঃসন্দেহে হতাশ করেছে তার কোটি ভক্তকে। এবার নিশ্চয় তিনি হাত প্রসারিত করবেন। শূন্য থেকে বলিউডের শীর্ষে পৌঁছানোর যাত্রা শাহরুখ খানের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। এতটুকু পথ পাড়ি দিতে তার শরীরের কত ফোঁটা রক্ত ঘাম হয়ে ঝরেছে, সেটা সম্ভবত শুধু তিনিই জানেন। বর্তমানে তার ছবিগুলো খুব ভালো করতে পারছে না। শুধু কিং খানেরই নয়, গোটা বলিউডের ছবিরই একই অবস্থা। এই সাময়িক ব্যর্থতা শাহরুখের অর্জনকে ধূলিসাৎ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। তিনি নিজেই বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে শিক্ষক হচ্ছে সফলতা। মানুষকে সবচেয়ে ভালো শিক্ষাটা তার ব্যর্থতা দেয় বলেই মনে করেন বলিউড বাদশাহ। এবারের জন্মদিনে জেনে নেওয়া যাক তার অজানা কিছু বিষয়-এক দিনে শাহরুখের আয় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক শাহরুখ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ হাজার ২৮ কোটি টাকার বেশি।
একেকটি ছবির জন্য ৭০-৮০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর, ‘পাঠান’-এর জন্য ১২০ কোটি রুপি আসবে ‘বাদশাহ’র পকেটে। যে কোনো ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনের জন্য তার পারিশ্রমিক চার কোটি রুপি।মুম্বাইয়ের বান্দ্রার সবচেয়ে অভিজাত এলাকায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মায়ানগরীর অন্যতম আকর্ষণ ‘মান্নাত’। বলা হয়ে থাকে, মুম্বাই দর্শন অসম্পূর্ণ থাকবে, যদি কেউ মান্নাতের সামনে দাঁড়িয়ে একটা ছবি না তোলে। আরব সাগরমুখী এই ছয় তলা বাংলোটি রাজপ্রাসাদের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের স্বপ্নের রাজমহলটি আধুনিকতা আর ঐতিহ্যের এক অদ্ভুত মিশেলে তৈরি। ২৭ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে মান্নাত অবস্থিত। ভেতরে রয়েছে জিম, সুইমিং পুল, বিশাল বাগান, একাধিক কামরা, জিমখানা, শাহরুখের অফিস, লাইব্রেরি, এমনকি আস্ত সিনেমাহল। ৪২ জন আরাম করে বসে সিনেমা দেখার মতো বড় হোম থিয়েটার রয়েছে মান্নাতের অভ্যন্তরে। সেই থিয়েটারের দেয়াল ক্ল্যাসিক হিন্দি ছবির পোস্টার দিয়ে সাজানো। আরব সাগরের তীরে অবস্থিত মুম্বাইয়ের সবচেয়ে সুন্দর প্রাসাদ বলে গণ্য করা হয় মান্নাতকে। শাহরুখের ট্রফি আর অ্যাওয়ার্ড রাখার জন্যই মান্নাতে রয়েছে একটা আলাদা কামরা।আদ্যোপান্ত সিনেমাপ্রেমী মানুষ শাহরুখের বাড়িতে প্রবেশের সময়ই ‘শোলে’, ‘রাম অউর শ্যাম’, ‘মুঘল-এ-আজম’-এর পোস্টার। চার্লি চ্যাপলিনের লাঠিও দেখতে পাবেন শাহরুখের মান্নাতে। নারিমান ডুবাসের কাছ থেকে ১৯৯৫ সালে এই বাংলোটি কেনেন শাহরুখ। সেই সময় এর নাম ছিল ভিলা ভিয়েনা। বাংলোটি কেনার পর ৪ বছর পর্যন্ত আইনি জটিলতার কারণে এর নাম পাল্টাতে পারেননি শাহরুখ। শেষ পর্যন্ত ২০০৫ সালে ‘ভিলা ভিয়েনা’র নাম বদলে রাখা হয় ‘মান্নাত’। বর্তমানে বাড়িটির বাজারদর ২০০ কোটি রুপি। মুম্বাইয়ে শাহরুখের বিলাসবহুল ‘মান্নাত’-এর দাম ২০০ কোটি রুপি। লন্ডনেও একটি বাড়ি রয়েছে অভিনেতার। অবশ্য বাড়ি না বলে প্রাসাদ বললেও ভুল হবে না! বিদেশের মাটিতে শাহরুখের সেই বাড়ির দাম ১৭২ কোটি রুপি। দুবাইতেও ১০০ কোটি রুপি মূল্যের একটি ভিলা রয়েছে ‘বাদশাহ’র।
শাহরুখের প্রযোজনা সংস্থা রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্টের বার্ষিক টার্নওভার ৫০০ কোটি রুপি। বহু দামি গাড়ি আগাগোড়াই স্থান পেয়েছে অভিনেতার পছন্দের তালিকায়। তার একটি বুগাটি ভেরনের দাম ১৪ কোটি রুপি। পিছিয়ে নেই তার ভ্যানিটি ভ্যানটিও। নাম ‘প্যালেস অব উইলস’ সাড়ে তিন কোটিরও বেশি রুপি খরচ করে সেটি কিনেছিলেন অভিনেতা। ৪.১ কোটি রুপির একটি রোলস রয়েস কুপও রয়েছে তার সম্পদের তালিকায়।সিনেমার পর্দায় কখনো একসঙ্গে দেখা যায়নি শাহরুখ ও আমিরকে। তবে একটি সিনেমায় প্রায় একসঙ্গেই অভিনয় করার কথা পাকাপাকি হয়ে গিয়েছিল তাদের। আমির খানের চাচাতো ভাই মনসুর আলী খানের ‘জোশ’ সিনেমায় কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল দুই খানকে। আমির চেয়েছিলেন ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সেই যমজ ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে, যেটিতে অভিনয় করে শাহরুখ বাজিমাত করেছিলেন। কিন্তু চরিত্রটির জন্য শাহরুখকেই পারফেক্ট মনে করেন পরিচালক। তাই ঐশ্বরিয়ার প্রেমিক চরিত্রে আমির রাজি হননি।বেশ কয়েকটি সিনেমায় নিজ নামেই অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তবে তিনি প্রথমবার নিজ নামে অভিনয় করেন গোবিন্দ অভিনীত ‘অচেনাক’ সিনেমায়। নন্দিত পরিচালক মকবুল ফিদা হুসেনের ‘গজ গামিনী’ সিনেমাতে এসআরকে আবারও নিজ নামে একটি ক্যামিও চরিত্রে হাজির হন। ১৯৯৫ সালে শাহরুখের বন্ধু সাংবাদিক সমর খান এক ডকুমেন্টারিতে জানান, শাহরুখ বেশ কয়েকটি সিনেমায় নিজ নামে অভিনয় করেছেন। তিনি এতে খুব স্বাছন্দ্যবোধ করতেন।