অস্ত্রভান্ডারে টান পড়েছে রাশিয়ার! সংকট কাটিয়ে উঠতে দ্রুতগতিতে অস্ত্র তৈরি ও সরবরাহের লক্ষ্যে নতুন কমিটি গঠন করেছে রাশিয়া। মঙ্গলবার ‘সবক্ষেত্রে গতি অর্জন’ শীর্ষক প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সভাপতিত্বে এ কমিটি গঠন করা হয়। বুধবার প্রকাশিত আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে বিলম্বসহ যুদ্ধক্ষেত্রে দারুণ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন পুতিন। ইতোমধ্যে তা তরান্বিত করতে নিজ সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন, আমলাতন্ত্রের সহায়তায় সৈন্যদের জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্র, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় রসদসামগ্রী সরবরাহ করতে। যুদ্ধক্ষেত্রের এই মৌলিক সংকটগুলোই ইউক্রেনের পালটা আক্রমণ প্রতিহতে রুশ বাহিনীকে অনেকটাই পিছিয়ে দিচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকটি রুশ গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ করার জন্য যে নতুন সেনা পাঠানো হচ্ছে তাদের পর্যাপ্ত মৌলিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়নি। মেডিকেল কিট এবং ফ্ল্যাক জ্যাকেটের সংকট রয়েছে। অনেককে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা করে নিতে বলা হয়েছে। নতুন এই ২ লাখ ২০ হাজার সেনাকে এখন ইউক্রেনে মোতায়েন করা হচ্ছে।আরও বলা হয়েছে, অস্ত্র সংকটে সেনাদের পুরোনো এবং অব্যবহারযোগ্য অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য করছে মস্কো। রাশিয়ার সৈন্যরা পুরোনো এবং কখনো কখনো খারাপমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। নতুন সৈন্যদলকেও সামান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধের প্রথম সারিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে পুতিন রাশিয়ায় একটি প্রশিক্ষণ সাইট পরিদর্শন করেন। এর মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছেন যে, দেশের সব ঠিক আছে। জাতিসংঘ বলছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার হামলায় ১৫ হাজার ২৪৬ জন বেসামরিক হামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজার ১১৪ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ৯ হাজার ১৩২ জন। জাতিসংঘের মতে, ৭.৭ শতাংশ ইউক্রেনীয় দেশ থেকে পালিয়ে ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে শরণার্থী হিসাবে বসবাস করছেন। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানান, ক্রমবর্ধমান দূরপাল্লার অস্ত্রের বিকল্প হিসাবে রাশিয়া বিপুলসংখ্যক ড্রোন ব্যবহার করতে পারে। ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষায় অনুপ্রবেশেরও চেষ্টা করতে পারে। এক প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘রাশিয়ার আর্টেলারি গোলাবারুদ শেষের পথে’।
এদিকে কৌশলগত প্রতিরক্ষা বাহিনী, পারমাণবিক আক্রমণে সক্ষম এমন একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবার ভার্চুয়াল এ ধরনের মহড়া দেখলেন পুতিন। বুধবার ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে বলে, পুতিনের নেতৃত্বে স্থলপথ, আকাশপথ এবং সাগরে কৌশলগত প্রতিরোধ বাহিনী নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেসময় ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহারিক উৎক্ষেপণ হয়েছিল।রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পুতিনকে একটি কন্ট্রোলরুম থেকে মহড়ার পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে। এ মহড়ায় রাশিয়ার দূর প্রাচ্যের উপদ্বীপ কামচাটকা ও উত্তর মহাসাগরের বারেন্টস সাগর থকে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয়। মহড়ায় ছিল দূরপাল্লার এয়ারক্রাফট ‘টু-৯৫’। ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার’ বলেছে, রাশিয়ার বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। এর কারণ, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের মজুত হ্রাস পেয়েছে। এটিই প্রমাণ করে রাশিয়া কৌশলগত সামরিক লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সরবরাহে ঘাটতি সত্ত্বেও ইউক্রেনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে রাশিয়া।
এবিএন