বন্দরে নাসিম ওসমান সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু। প্রথম দিনে
টোল আদায় ৪১ হাজার ৪শ আশি টাকা
যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো নারায়ণগঞ্জের বন্দর
উপজেলাবাসীর স্বপ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান
৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু ।গতকাল( সোমবার) দুপুরে গণভবন থেকে
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
উদ্বোধন ঘোষণার পর রাত ১২ এক মিনিটে শুরু হয় যানবাহন
চলাচল। বন্দরের ফরাজীকান্দা এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে
অপু ১৫ টাকা টোল দিয়ে মোটর সাইকেলে প্রথম সেতুটি পার হন।
এরপর একে একে রিকশা ভ্যান , প্রাইভেট কার পণ্যবাহী ট্রাক ও
কভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য ছোট ছোট পরিবহন পার হতে শুরু করে।
সেতুর সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার এস এম জামিল জানান,
সোমবার রাত ১২ টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর একটা পযন্ত সেতুর
টোল প্লাজা দিয়ে এক হাজার একশ’ একটি গাড়ি পার হয়েছে। এদের
মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক , হোন্ডা ও অটোরিকশার পরিমাণই বেশী। এ
সময়ের মধ্যে টোল আদায়ের পরিমাণ ৪১ হাজার ৪শ ৮০ টাকা। সেতু
দিয়ে আসা ট্রাক চালক সগির মিয়া জানান, তিনি ট্রাক নিয়ে
স্বাচ্ছন্দেই সেতু পার হতে পেরেছেন। কোনো রকম ঝামেলা হয়নি।
কভার্ডভ্যান চালক আক্তার হোসেন জানান, আগে নবীগঞ্জ
গুদারাঘাটের ফেরি দিয়ে অথবা বহু পথ ঘুরে কাঁচপুর ব্রীজ দিয়ে
মালামাল আনা নেওয়া করতেন । তখন প্রচুর সময় লাগতো। এখন
সেতু দিয়ে অনায়াসে অল্প সময়ে তিনি শহর থেকে পণ্য নিয়ে আসতে
পারছেন। এতে টাকা সাশ্রয়ের পাশাপাশি সময় কমেছে প্রায় দুই
ঘন্টা। অটোরিকশা আলমগীর মিয়া ৫ টাকা টোল দিয়ে সেতু পার হতে
পেরে মহাখুশি। তিনি বলেন ,অটোতে কোনো যাত্রী নেননি। মন
চেয়েছে তাই যাত্রী শুন্য খালি অটো নিয়েই তিনি ছুটেছেন , সেতু পার
হয়েছেন।
বন্দরের বালিয়া এলাকার শিক্ষার্থী সাদিয়া জানান, তিনি নদীর
পশ্চিম পাড়ের মুসলিম নগর এলাকার একটি বেসরকারী বিশ্ব
বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। আগে কয়লাঘাট দিয়ে অনেক দুর্ভোগ
নিয়ে নৌকায় নদী পার হয়ে কলেজে যেতেন। এখন সেতু দিয়েই যেতে
পারবেন। সেতুটি হওয়ায় উচ্ছ্বসিত তিনি।
নারায়ণগঞ্জ পূর্বাঞ্চলীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এম
জামালউদ্দিন জানান, সেতুটি চালু হওয়ায় দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের
সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট বিভাগের যোগাযোগ সহজ
হয়েছে। যানবাহন গুলো নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রবেশ না করে মদনপুর
হয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের
দিকে যেতে পারছে। একইভাবে পদ্মা সেতু হয়ে আসা যানবাহন গুলো
শীতলক্ষ্যা সেতু পার হয়ে মদনপুর দিয়ে অনায়াসে দক্ষিণ ও
পূর্বাঞ্চলে যেতে পারছে। ফলে শহরে যানজটের কোনো আশংকা
নেই। সেতুটি শহরের সাথে বন্দর উপজেলার সরাসরি সংযোগ
স্থাপনের পাশাপাশি যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নবদিগন্তের সূচনা
করেছে। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও উন্মোচিত হয়েছে অমিত
সম্ভাবনার নতুন দ্বার।
উদ্বোধনের পর গত দুই দিনে কয়েক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক,
প্রাইভেটকার, রিকশা ভ্যান যাতায়াত করেছে। এ সেতু পার হতে
বড় বাসে ২২৫ টাকা . মিনি বাসে ১২৫ টাকা ট্রেলারে ৬২৫ টাকা,
হেভি ট্রাকে ৫০০ টাকা , মাঝারি ট্রাকে ২৫০ টাকা, মিনি ট্রাকে
১৯০ টাকা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত গাড়িতে ১৫০, মাইক্রোবাসে ১০০
টাকা , ফোর হুইল চালিত যানবাহনে ১০০ টাকা , ৩/৪ চাকার
মোটরাইজড যানে ২৫ টাকা , মোটর সাইকেলে ১৫ টাকা ও রিকশা,
ভ্যান ,সাইকেল ও ঠেলা গাড়িতে ৫ টাকা টোল দিতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন এই সেতু কেন্দ্র করেই অবহেলিত বন্দর
এলাকায় গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। ৬ লেন বিশিষ্ট
সেতুর দৈর্ঘ্য ১২৩৪ দশমিক ৫০ মিটার এবং প্রস্থ ২২ দশমিক
১৫ মিটার । সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৬০৮ কোটি টাকা।