স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত। আমরা কাউকে ভয় করি না। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, মোকাবিলায় প্রস্তুত আছি।বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) তিন বাহিনীর (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌ বাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী) প্রধান ও পুলিশ প্রধানের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক শেষে এ কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘মিয়ানমার নিজেদের অভ্যন্তরে নানারকম কার্যক্রম চালাচ্ছে, যেটি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, আমরা কাউকে কাউন্ট করি না।’এদিকে সীমান্তে মিয়ানমারের সঙ্গে উত্তেজনায় সব পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেনা মালঞ্চে অনুষ্ঠানিত ‘দ্য রোল অব বাংলাদেশ ইন গ্লোবাল পিচ’ শীর্ষক সেমিনারের প্রশ্নোত্তর পর্বে এ কথা জানান তিনি।প্রধানমন্ত্রীকে সব হালনাগাদ তথ্য জানানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সীমান্তে মিয়ানমারের সঙ্গে উত্তেজনায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিয়োজিত আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী যখন যা করতে হবে তার জন্য সেনাবাহিনীও প্রস্তুত আছে।সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সব ধরনের নিয়ম লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় একের পর এক ‘আগ্রাসী’ কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে মিয়ানমার। সীমান্তের শূন্যরেখা সংলগ্ন এলাকায় মাইন পুঁতে রাখার ঘটনা অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও তাই করছে দেশটি। আগে এ ধরনের মাইন বিস্ফোরণে রোহিঙ্গারা হতাহত হলেও এখন বাংলাদেশিরা এর শিকার হচ্ছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি এক যুবকের পা উড়ে যায় এ মাইন বিস্ফোরণে।
একইদিন মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলায় এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত এবং আহত হন পাঁচজন। যুদ্ধ পরিস্থিতি ছাড়া সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অবস্থান আন্তর্জাতিক নীতিবিরুদ্ধ হলেও দেশটি তা মানছে না। একইসঙ্গে দেশটির একরোখা আচরণে বাড়ছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে বারবার সতর্ক করলেও কর্ণপাত করছে না দেশটি।নেইপিদোর এমন উসকানিমূলক আচরণে বিভ্রান্ত হতে চায় না ঢাকা। চলছে কূটনৈতিক পথেই সমাধানের চেষ্টা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমর্থন চাইছে বাংলাদেশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ২০ দেশের কূটনীতিককে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিষয়ে অবগত করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব। সহিংসতা এড়াতে বাংলাদেশের সহনশীল আচরণকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কূটনীতিকরা।এ সময় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালি, ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। যোগ দেন জাতিসংঘ ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিও। তবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না চীনের প্রতিনিধি।ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব জানান, মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতেই বিদেশি কূটনীতিকদের আহ্বান করা হয়েছে। তারাও আশ্বাস দিয়েছেন পাশে থাকার।এদিকে নেইপিদোর সঙ্গে ঢাকা সামরিকসহ সব স্তরে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব।এর আগে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আসিয়ানভুক্ত ৭ দেশের রাষ্ট্রদূতকে পরিস্থিতি অবগত করা হয়। জোটের সদস্য মিয়ানমারকে সহিংসতা থেকে দূরে রাখার আহ্বান জানানো হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে।