রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত ঢাকার ১৪টি দূতাবাস ও হাইকমিশন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৪টি দেশের দূতাবাসের যৌথ বিবৃতিতে একথা বলা হয়।
বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা সই করেছেন। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘৫ বছর পর আমরা ২০১৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের ভয়ঙ্কর ঘটনা স্মরণ করি। যা প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার থেকে তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছিল। আমরা বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের উদারতা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অব্যাহত আশ্রয় দেওয়ার জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।’বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছি। পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসন ও এই সংকটের সমাধান চাই।’‘আমরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দ্বারা মিয়ানমারজুড়ে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন উদ্বেগের সঙ্গে নোট করছি। আমরা মিয়ানমারে দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসানের আহ্বান জানাই।’
‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক জবাবদিহিমূলক উদ্যোগের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।’‘আমাদের দেশগুলো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী কিছু ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আমরা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে মিয়ানমারে রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট সমাধানেও চাপ আমরা অব্যাহত রাখব, যেন এই সমাধানে অবশ্যই রোহিঙ্গাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা, সুরক্ষা এবং শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অংশীদারদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।’‘আমরা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে থাকাকালে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনে গুরুত্বের ওপর জোর দিই। একই সঙ্গে শর্ত সাপেক্ষে তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি। এছাড়া, আমরা কক্সবাজারের স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে সমর্থন করে যাচ্ছি যারা শরণার্থীদের আতিথেয়তা দিচ্ছে।’‘৫ বছর পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের জন্য তাদের সমর্থনে সংহতিতে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। আমরা এই সংকট এবং এর কারণগুলোর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাব।’মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন রোহিঙ্গারা। এরপর গত ৫ বছরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পাঁচ বছর পরে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার পরও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন না করতে পারায় তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।