৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার | দুপুর ২:১০ মিনিট
ঋতু : শীতকাল | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

শিরোনাম :
হিজবুল্লাহর আরেক নেতাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের হদিস নেই ইলিশের কেজি ৭০০ টাকা নির্ধারণ চেয়ে আইনি নোটিশ সিটি করপোরেশন পরিচালনায় কমিটি, কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকবেন যিনি কর্মীদের উদ্দেশে শিবির সেক্রেটারির জরুরি বার্তা ‘শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণ করা হবে, আইন ভাঙলে ব্যবস্থা’ রেমিট্যান্স নিয়ে আবারও সুখবর চাঁদাবাজির অভিযোগে সেনা বাহিনীর হাতে সোনারগাঁও উপজেলা  বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আতাউর গ্রেপ্তার বন্দরে পরিবেশ দূষণের দায়ে ব্যাটারী কারখানা বন্ধের নোটিশ সড়ক যেন অপরাধীদের কবলে ! এ যেন মরন ফাঁদ!!  মদনপুর -মদনগঞ্জ সড়ক|| পুলিশী টহল বৃদ্ধির আশ্বাস ওসির… সাবেক এমপি শামীম ওসমানের স্নেহভাজনআলীর বিএনপি নেতা হওয়ার খায়েশ পূর্বাচলের অস্ত্র উদ্ধার মামলা৭ বছরেও অস্ত্রের উৎস মেলেনি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল মধুপুরের আনারস মিরপুরে নয় কানপুরেই শেষ সাকিবের ক্যারিয়ার! অভিনেতা আলাউদ্দিন লাল মারা গেছেন পঞ্চগড়ে কুকুরের কামড়ে নার্সসহ আহত ১৪ দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচন কখন হবে সেটা রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত : জয়নুল ফারুক স্কুলে ভর্তিতে এ বছরও থাকছে লটারি শাসন পদ্ধতি শেখ হাসিনাকে দানব বানিয়েছে : জিএম কাদের

“পর্বতারোহী ও সাইক্লিস্ট রেশমা নাহার রতœা হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং জ্বালানি সাশ্রয় ও যানজট রোধে পৃথক সাইকেল লেন বাস্তবায়ন চাই”- দাবিতে মানববন্ধন

ncitynews24.com
প্রকাশিত: শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০২২ | আপডেট: শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০২২

“পর্বতারোহী ও সাইক্লিস্ট রেশমা নাহার রতœা হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং জ্বালানি সাশ্রয় ও যানজট রোধে পৃথক সাইকেল লেন বাস্তবায়ন চাই”- দাবিতে মানববন্ধন
২০২০ সালের ৭ আগস্ট একাধারে পর্বতারোহী, সাংস্কৃতিক কর্মী, দৌড়বিদ, সাইক্লিষ্ট ও শিক্ষক রেশমা নাহার রতœা রাজধানীর ঢাকার চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন লেক রোডে সাইক্লিং করার সময় একটি মাইক্রোবাস চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। পিচঢালা পথে রতœার শরীরের ছোপ ছোপ রক্ত আর দুমড়ানো-মোচড়ানো সাইকেলটির ছবি দেখে আমাদের ভেতরটাও আজও কেঁপে উঠে। এই ঘটনার প্রতিবাদে পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা)সহ সমমনা সংগঠনগুলো ২০২০ সালের ৯ আগস্ট জাতীয় জাদুঘরের সামনে একটি অবস্থান কর্মসূচী ও ১১ আগস্ট,২০২০ এ হত্যাকান্ডের বিচার ও সাইকেল লেনের দাবীতে শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত সাইকেল র‌্যালীর আয়োজন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট পবা’সহ সমমনা ৭টি সংগঠনের উদ্যোগে এই হত্যাকাণ্ডের অগ্রগতি ও করণীয় এবং সাইকেল লেনের দাবীতে একটি অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ ঘটনায় নিহতের ভগ্নিপতি মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে শেরে বাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গাড়ীর চালক এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে আটক এবং মাইক্রোবাসটি জব্দ করে। পরবর্তীতে আটককৃত ব্যক্তি ছাড়াও পেয়ে যায়। আলোচিত মামলাটি বর্তমানে পুলিশের তদন্তাধীন রয়েছে।
এমতাবস্থায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোল (পবা) বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ সহ সমমনা বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে আজ শনিবার সকাল ১১টায় শাহবাগস্থ জাতীয় যাদুঘরের সামনে পর্বতারোহী ও সাইক্লিস্ট রেশমা নাহার রতœা হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং জ্বালানি সাশ্রয় ও যানজট রোধে পৃথক সাইকেল লেন বাস্তবায়ন চাই। দাবিতে একটি মানবন্ধনের আয়োজন করে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ এর সঞ্চালনায় আজকের এই মানবনন্ধনে বক্তব্য দেন বাংলদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, নিহত রতœার বড়বোন সালমা খানম, বিডি টুরিষ্ট সাইক্লিষ্টের সমন্বয়ক রোজি আক্তার দুলিন, মানবাধিকার কর্মী মনিরুল ইসলাম মনির, প্রমুখ।
পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আব্দুস সোবহান বলেন সরকারের কাছে দাবি জানাই রতœা হত্যার ন্যায় বিচার ও দোষীদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি। আমাদের পরিবহন ব্যবস্থা মূলত: সড়ক বা প্রাইভেট কার কেন্দ্রিক। যদি আমরা শহরগুলোতে প্রয়োজণীয় স্থানে পর্যান্ত সাইকেল লেন ব্যবস্থা করি তবে তবে দূর্ঘটনার পরিমান অনেকাংশে কমে আসবে। সেই লেনটিতে অবাধে, নির্বিঘেœ যাতায়ত করা যায় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমরা যদি পায়ে হেটে যাতায়াত করি তাহলে পরিবেশ দূশন ও জনস্বাস্থ্যের প্রভূত উন্নতি সাধন হবে। যারা আফিস কিংবা কর্মস্থলে যাতায়াত করেন তাদের সাইকেল চলাচলে একটি নেটওর্য়াক তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে সাইকেল পার্কিং ষ্ট্যান্ড করতে হবে। তাহলেই আমরা এ ধরনের দূর্ঘনা থেকে মুক্তি পাব আমরা পাব জনবান্ধব, পরিবেশ বান্ধব স্বাস্থ্য সম্মত নগরী। বাংলাদেশ সইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিশোধের সভাপতি জনাব আমিনুল ইসলাম টুব্বুস বলেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই যান্ত্রীক শহরে সাইকেল লেন খুবই জরুরী দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান/রাস্তার রাস্তার পৃথক সাইকেল লেন তৈরী হলে সুস্থ ও সুন্দর পরবেশ পাবো। রেশনা নাহার রতœার বড়বোন মোছাম্মত সালমা খানম বলেন রেশনা নাহার রতœা হত্যা কান্ডের দুই বছর অতিবহিত হরেও মামলাটির বিচর সম্পন্ন হয়নি। আমরা চাই মামরাটির র্কাক্রমে তি আনয়নর মাধ্যমে দ্রæত বিচারকার্য সম্মন্ন হোক এবং সার্বিক বিচার হোক। মানবাধিকার কর্মী মো: মনিরুল ইমলাম মনির বলেন রেশমা নাহার রতœা এভারেষ্ট জয় করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল শুধু মাত্র সাইকেল লেন বাস্তবায়ন না হওয়ার কারনে জ্বালানী সাশ্রয়, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সীমাহীন যানজট থেকে মুক্তি, বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে সর্বোপরি বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সাইকেল লেন বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
এই মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে আবারও দেখিয়ে দিল, এই নগরে আমরা কতটা অনিরাপদ। পর্বতারোহী রতœার মতো সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ নিহত এবং আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। প্রতিদিনই বাড়ছে সড়কে দুর্ঘটনার নামে এ ধরনের হত্যাকান্ড। সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুটা এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দুদিন পর আমরা এইগুলো ভুলে যাই। কারন এসব দূর্ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার হয় না। শুধু রতœা নয় এরকম আরো অনেক দূর্ঘটনাই ঘটে, যার বিচার কার্য সম্পন্ন হয় না। আইনের শত মারপ্যাঁচ এর ফলে আসামী জামিন পেয়ে যায়। মানুষের ভিতরে চেতনাকে জাগ্রত করতে হবে যেন তারা ভালো কাজের জন্য এগিয়ে আসে।
একটি পরিবার থেকে যখন কেউ সাইকেল চালাতে ঘরের বাইরে যায় তখন পরিবারের লোকজন দূঃচিন্তা করে এ্যাকসিডেন্ট হবার ভয়ে। কারন আমাদের রাস্তাঘাট সাইকেল চালানোর জন্য উপযুক্ত নয়। সাইকেল বাহনটিকে নিম্নশ্রেনির লোকজনের বাহন হিসাবে দেখা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। ধীর গতির এই বাহনকে সম্মান জানানো এবং সাইকেল চালনাকে প্রতিষ্ঠিত করে সাইকেল লেন করা প্রয়োজন।
বিশ্বে নেদারল্যান্ডসে মাথাপিছু সর্বাধিক বেশি সাইকেল ব্যবহার করা হয়। তবে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনকে বিশ্বের সবচেয়ে সাইকেল বান্ধব শহর হিসেবে গণ্য করা হয়। নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক ও জার্মানীতে সবচাইতে বেশি সাইকেল ব্যবহৃত হয়। এসব দেশে সাইকেল চালানোর জন্য রাস্তার পাশে পৃথক লেন রয়েছে। তবে ইদানিং জাপান, চীন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে ছোটো দূরত্ব যাতায়াতের জন্য সাইকেল চালানোতে সরকারিভাবে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। অফিসযাত্রী কিংবা স্কুল-কলেজে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগও দিচ্ছে কোনো কোনো শহর। এসব দেশে সড়ক পরিবহণের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বাহন হচ্ছে বাইসাইকেল। এটি তৈরি হয়েছে সহজ জ্যামিতিক পদ্ধতিতে, চালককে সড়কের আঘাত থেকে রক্ষা করতে এবং কম গতিতে চালানো সহজ করতে। এসব দেশে শিশুদেরকে সাইকেল চালানোর দক্ষতা সম্পর্কে শিক্ষা দেওযার জন্য অনেক স্কুল ও পুলিশ ডিপার্টমেন্ট শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে, বিশেষ করে তাদেরকে সড়কের নিয়ম কানুন গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া হয়, যেহেতু তারা সাইক্লিস্ট হওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করে। বয়স্ক সাইক্লিস্টদের শিক্ষা দেওয়ার জন্যও কিছু সেচ্ছাসেবী সংস্থা আছে।
পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে সাইকেল সারা পৃথিবীতেই জনপ্রিয়। একই সঙ্গে এটি স্বাস্থ্যসম্মত ও সাশ্রয়ী। এছাড়া নগরে যানজটের ভোগান্তি থেকে বাঁচতেও সাইকেলের জুড়ি নেই। নগরে স্বাস্থ্যসচেতন অনেকেই যাতায়াতে নিয়মিত সাইকেল ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে তরুণদের সাইকেল ব্যবহারে আগ্রহ বেশি লক্ষণীয়। তাই কিশোর, তরুণদের উৎসাহিত করণে পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত শহরের সাইকেল লেনের ভিডিও ক্লিপ প্রচার করতে হবে। যাতে করে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা বাহন হিসাবে সাইকেল ব্যবহারে আরো বেশি উৎসাহিত হয়।
সাইকেল লেন ব্যবহারের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করে পরিবেশ বান্ধব এই বাহনের জনপ্রিয়তা বাড়াতে শুধু ঢাকা নয়; অন্যান্য বিভাগীয় শহরের রাস্তাগুলোতে আলাদা করে বাইসাইকেল লেন তৈরি করা জরুরি। আজকের এই মানববন্ধন থেকে পৃথিবীর অনেক দুর্গম পর্বত জয় করা রতœার এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার, অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি এবং সেইসাথে সাইক্লিস্টদের জীবনের নিরাপত্তা বিধানে দেশে প্রয়োজনীয় সকল স্থানে সাইকেল লেন বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।

দাবীসমূহঃ
১. সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত রতœা হত্যার বিচার কার্য সম্পন্ন করে অপরাধীর কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা।
২. সম্পূর্ণ সাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরি যেমন- বাসা থেকে কর্মস্থান বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করা।
৩. সাইকেল বান্ধব অবকাঠামো তৈরি করা।
৪. সাইকেল আরোহীদের আরো সচেতনভাবে সাইকেল চালানোর জন্য সর্তক করা এবং নিয়ম মেনে সাইকেল চালাতে উৎসাহিত করা।
৫. সাইকেল লেন ব্যবহার করার প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি করা।
৬.পরিবেশবান্ধব এই বাহনটি ব্যবহারের সুবিধা পেতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাইক্লিং এর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৭. দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য নিরাপদ সড়ক ও সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করা।
৮. যে স্বল্প পরিমাণ সাইকেল লেন আছে তা দখলমুক্ত করে নিরাপদ সাইক্লিং করার নিশ্চয়তা প্রদান করা।
৯. পারিবারিকভাবে সন্তানকে সাইকেল চালানোয় উৎসাহিত করার জন্য জনমত গড়ে তোলা।

আয়োজনেঃ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ, বনলতা নারীর অধিকার, দেবীঘাট সমাজকল্যাণ সংসদ, সূচনা নারী ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা, পরিবর্তন চাই।