নিজস্ব প্রতিবেদক,নারায়ণগঞ্জ: বন্দরের লাঙ্গলবন্দ চিড়ইপাড়া কলোনীর একক আদিপত্য বিস্তারে প্রতিপক্ষ সিরাজ ড্রাইভারকে গভীর রাত পর্যন্ত মদ খাওয়ানোর পর স্কুলের মাঠে নিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল ইসমাইল হোসেন ও তার বাহিনী। এসময় স্থানীয় এক দোকানদার ওই ঘটনা দেখে ফেলায় প্রাণে বেচে গিয়েছিলেন সিরাজ ড্রাইভার। ওই হামলার শিকারে সিরাজ ড্রাইভার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসলেও দীর্ঘ ৩ মাস শারীরিক অসুস্থায় ভুগছিলেন। এ ঘটনায় ইসমাইল হোসেনসহ তার সহযোগীদের আসামি করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন আহত সিরাজ ড্রাইভারের স্ত্রী রাসিদা বেগম। ১৯৯১ সালের বিএনপির সরকারের আমলে চিড়ইপাড়া কলোনীর বাসিন্দা (বর্তমানে তিনি মারা গেছেন) সিরাজ ড্রাইভারের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটিয়েছিল । মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কথিত স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, চিড়ইপাড়া কলোনীর মৃত ইদ্রীস মিয়ার ছেলে।
সম্প্রতি, উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক কাজিমউদ্দিন প্রধানকে উদ্দেশ্য করে ইসমাইল হোসেনের সেচ্ছাচারিতার বিরুপ মন্তব্য স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীসহ জেলা জুড়ে ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে তোলপার সৃষ্টি হয়। ইসমাইলের বহিস্কারের দাবিতে ভাবে পৃথক পৃথক ধামগড় ও মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ সভা সমাবেশের আয়োজন করেন।
দুই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ সভার পর থেকে চিড়ইপাড়াসহ পাশ্ববর্তী কামতাল, যোগীপাড়া, মালিভিটা, মহজমপুর গ্রামের দলীয় সাধারণ নেতাকর্মীগন ও সাধারণ মানুষ ইসলাম হোসেনের অপকর্মের বিরুদ্ধে মূখ খুলতে শুরু করে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানাগেছে, সিরাজ ড্রাইভার চিড়ইপাড়া কলোনীতে বসবাস করলেও ঢাকা-দাউদকান্দি রুটে বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের একজন পরিচিত ব্যক্তি ছিলেন সিরাজ ড্রাইভার। সিরাজ পেশায় একজন বাস চালক। এর পাশাপাশি সামাজিক ভাবে স্থানীয় বিচার সালিশি করতেন। চিড়ইপাড়া কলোনীতে একক আদিপত্য বিস্তার করতে ইসমাইল হোসেন এলাকায় গ্রুপিং তৈরী করে সিরাজ ড্রাইভারের সঙ্গে মিশে কৌশলে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত মদ খাওয়ানোর পর ল্যারি ওয়ার্ড মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে প্রথমে লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি চাপা দিতে নিয়ে যাচ্ছিল। এসময় স্থানীয় এক দোকানদার মানুষের গেঙ্গানির শব্দ শুনে এগিয়ে যায়। পরে ওই দোকানদারের অনুরোধে এবং দোকানার স্বাক্ষী হয়ে যাবে এই আাশঙ্কায় সিরাজ ড্রাইভারকে ছেড়ে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ছিটকে পড়ে ইসমাইল ও তার বাহিনী। পরে খবর পেয়ে সিরাজ ড্রাইভারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এঘটনায় গুরুতর আহত সিরাজ ড্রাইভারের স্ত্রী রাসিদা বেগম বাদি হয়ে ইসমাইল ও তার সহযোগীদের আসামি করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। দীর্ঘ ৩ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর স্থানীয় ভাবে শিল্পপতি জামালউদ্দিন, বর্তমানে ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদের বড় ভাই মরহুম কামিজউদ্দিন কামাসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে মিমাংসা করা হয়েছিলো। এই হামলার পর মুত্যুর আগ পর্যন্ত সিরাজ ড্রাইভার অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
কলোনীর একক আদিপত্য বিস্তার করতে সিরাজ ড্রাইভারকে ঘায়েল করতে নানা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে ইসমাইল। এর মধ্যে চিড়ইপাড়া এলাকার রফিককে খুন করা হয়। প্রতিপক্ষ শত্রু হিসাবে ভুক্তভোগী নিহত রফিকের পরিবারকে সিরাজ ড্রাইভার ও তার পরিবারের ওপর উস্কানী দিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর করায় ইসমাইল। জীবন বাচাতে সিরাজ ড্রাইভার ও তার পরিবার এলাকা ছেড়ে বহু বছর অন্যত্রে বসবাস করেন।
এ হত্যাকান্ড ও মামলাকে পুজি করে সিরাজ ড্রাইভারকে এলাকা ছাড়া করে নিহত রফিকের পরিবারকে নিজের আয়েত্বে এনে ইসমাইল হোসেন চিড়ইপাড়া কলোনীতে এক আদিপত্য বিস্তার লাভ করে নিহত রফিকের পরিবারকে মাদক কারবারে নামিয়ে দিয়ে চিড়ইপাড়া এলাকাটি জেলার একটি অন্যতম মাদক স্পট হিসাবে পরিচিত লাভ করে। চিড়ইপাড়া এলাকায় মাদকের ছড়িছড়ি ব্যপক হাড়ে বৃদ্ধি পায়। চিড়ইপাড়া এলাকায় মাদক কেনা-বেচা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। মাদকের মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে চিড়ইপাড়া মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করে স্থানীয় সাংবাদিক নূরুজ্জামান মোল্লা। স্থানীয় সাংবাদিক হিসাবে মাদকের বিরুদ্ধে লেখালেখিতে পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা অব্যহত থাকে।
লেখালেখিতে পুলিশের তৎপরতায় মাদক কারবারিরা গা-ঢাকা দিয়ে মাদক বেচাকেনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসলে তেলে বেগুনে জ¦লে উঠেন ইসমাইল। একক আদিপত্যে মাদক নিয়ন্ত্রণের অবৈধ অর্থ উপার্জনে ইসমাইলের বাটা পড়ে । এর প্রতিহিসংসায় সাংবাদিক নূরুজ্জামানের ওপর মাদক কারবারিদের উস্কে দিয়েছে মাদক কারবারিদের। মাদক কারবারিদের উস্কানীতে দুই দফা হামলার শিকার হন সাংবাদিক নূরুজ্জামান মোল্লা। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ বাস স্ট্যান্ডে তৎকালিন বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল সালামকে সহ নূরুজ্জামানের ওপর প্রথম হামলা করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ইসমাইল হোসেন মাদক কারবারিদের সঙ্গে নিয়ে নূরুজ্জামানের ওপ দ্বিতীয় দফা হামলা করা হয়। এ ঘটনায় ইসমাইল হোসেনকে প্রধান আসামি করে সাংবাদিক নূরুজ্জামানের স্ত্রী আইরিন সুলতানা রুমা বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ইসমাইল হোসেন এই মামলার আসামি হওয়ার পর পুলিশের ভয়ে দীর্ঘ ছয় মাস এলাকা ছেড়ে অন্যত্রে পালিয়ে আতœগোপনে থাকে। এই মামলায় এক মাদক কারবারির টাকায় আদালত থেকে জামিনেএসে চিড়ইপাড়া মাদক কারবারিদের সঙ্গে নতুন করে সখ্যতা গড়ে তুলে মাদক কারবারিদের পক্ষে সাংবাদিক নূরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে ইসমাইল । এর মধ্যে মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দলিল লেখক আলাউদ্দিন ভেন্ডার মারা যাওয়ার পর ইসমাইল হোসেন বনে গেছে মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে দলীয় পদপদবীর সীল মোহর তৈরী করে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি মুছাপুর ও ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের দুই চেয়ারম্যানের সীল মোহর নিজেই তৈরী করে স্বাক্ষর জাল করে সাংবাদিক নূরুজ্জামান মোল্লা’র বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে নিজেই সই স্বাক্ষর দিয়ে সাজানো মিথ্যা বানোয়াট একটি দরখাস্ত দাখিল করে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে। মিথ্যা ও বানোয়াট সাজানো দরখাস্তে হয়রানীর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় ইসমাইল।
মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদপদবির দাপটে তার দলীয় পরিচয়ে পুরাতন ব্যবসায়ীরা নতুন লোকজনের মাধ্যমে চিড়ইপাড়া এলাকায় মাদক কেনা-বেচা শুরু করে। ইয়াবা নামের এক মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে ইসমাইলের প্রতিপক্ষ সিরাজ ড্রাইভারের ছেলে রাসেল আহম্মেদ টিটু । অতিরিক্ত ইয়াবা সেবনে দুই মেয়ে রেখে অবশেষে মুত্যু বরণ করে টিটু। এর পর থেকে সাংবাদিক নূরুজ্জামান মোল্লা প্রকাশ্যে মাঠে নেমে চিড়ইপাড়া মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দুইজন মাদক কারবারি এবং মাদক সেবীকে সাভাবিক জীবনে ফিরে আনেন। হেঁটে হেঁটে চিড়ইপাড়া ইয়াবা বিক্রির অভিযোগে এক পরিবারকে এলাকা ছাড়া করে অন্যত্রে পাঠিয়ে দেয়। আলো বেগম নামে এক সুন্দরী নারী ভাড়া বসবাস করে লক্ষলক্ষ ইয়াবা পাইকারি বিক্রি করতো চিড়ইপাড়া কলোনীতে। ওই নারীকে একদিনের মধ্যে এলাকা ছাড়া করেছে সাংবাদিক নূরুজ্জামান। ওই নারী মাদক কারবারিকে এলাকা ছাড়া করায় অবৈধ অর্থ উপার্জন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে নূরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ইসমাইলের সাজানো মিথ্যা দরখাস্তে স্বাক্ষর করেছিল ওই বাড়ির মালিক।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বন্দর থানা কম্পাউন্ডে এক মাদক বিরোধে সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে এমপি সেলিম ওসমান বলেছেন চিড়ইপাড়া কলোনীতে ঘরে ঘরে মাদক। এই মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন। পরে চিড়ইপাড়া মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশের ব্যবস্থা গ্রহনে উল্টো পুলিশের উধ্বর্তন দপ্তরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট দরখাস্ত করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
তৎকালিন কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ উপ পরিদর্শক আনোয়ার হোসাইন বলেন, লাঙ্গলবন্দ বাসস্ট্যান্ডে প্রকাশ্যে ফেনসিডিল বিক্রি করছিল ড়িইপাড়া এলাকার এক মাদক ব্যবসায়ী। পথচারিদের সহায়তায় ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার করা হয়। ফেনসিডিলসহ ওই মাদক ব্যবসায়ীকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় চিড়ইপাড়া মাদক ব্যবসায়ী ওসমান গনি হত্যা মামলার আসামি হানিফা, বেনসন ছোবান, ইসমাইল হোসেনসহ আরো কয়েকজনের যোগসাজাসে উল্টো স্থানীয় সাংবাদিক নূরুজ্জামান মোল্লা, স্কুল শিক্ষক ইব্রাহিম খলিলসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাজানো একটি দরখাস্ত করে পুলিশ হেডকোয়াটার।
ইসমাইল হোসেন মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদপদবির বিষয় প্রসঙ্গে লাঙ্গলবন্দ নগর এলাকার স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ইয়াকুব জানান, আলাউদ্দিন ভেন্ডার মারা যাওয়ার পর ইসমাইল হোসেন নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দাবি তুলেছিল। এর পর থেকে ইসমাইল হোসেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দেয়। ইসমাইল পদ পদবির বিষয়ে কোনো বৈধতা দেখাতে পারবে না। স্বঘোষিত কথিত।