সারাদেশে সোমবার থেকে ঘোষিত কঠোর লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কায় ফের ঢাকা ছাড়ার হিড়িক পড়েছে। দলে দলে মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। অনিশ্চয়তা-দুশ্চিন্তা ও পথের কষ্ট সঙ্গে নিয়েই সবাই ঢাকা ছাড়তে তৎপর। সড়ক-মহাসড়কের মোড়ে মরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থান নিয়েও মানুষের ঢল সামাল দিতে পারছে না। গণপরিবহন না থাকলেও, হেঁটে রাজধানী ছাড়ছে সবাই। আবার অনেকেই একইভাবে ঢাকায় প্রবেশ করছে।
আজ শনিবার (২৬ জুন) সকাল থেকেই গাবতলী এলাকার চিত্র গত কয়েক দিনের তুলনায় বদলে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন পথ ধরে লোকজন এসে নামছে গাবতলীতে। সঙ্গে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে বাড়িতে যাবেন। সবাই যথারীতি গাবতলী থেকে পায়ে হেঁটে আমিনবাজার নিয়েই মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনে তারা ঢাকা ছাড়তে মরিয়া। ঢাকামুখী অনেক গাড়ি আমিন বাজার চেক পোস্টে পুলিশ ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এসব গাড়িগুলো সেখানে অবস্থান করায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার থেকে রাস্তার উভয় দিকেই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সাভার থেকে ঢাকায় এসে অফিসগামী লোকজনকে দীর্ঘ যানজটে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সাভার থেকে ঢাকা আসতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। রাজধানীর উত্তরা আব্দুল্লাপুরে রাখুন ঘরমুখো এবং ঢাকা মুখে মানুষের স্রোত বইছে। সবার ধারণা এবার কঠোর লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তাই দীর্ঘ দিনের প্রস্তুতি নিয়েই এবার ঢাকা ছাড়ছেন তারা। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার লোকজন টঙ্গী থেকে নানা উপাযয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুঁটছে। সরাসরি বাস বা ট্রেন না পাওয়ায় তাদেরকে ভেঙে ভেঙে যেতে হচ্ছে। সকাল থেকেই শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও ফেরিঘাটে মানুষের ঢল নেমেছে। শিমুলিয়া ফেরিঘাট থেকে ১৭টি ফেরি চলাচল করেও মানুষের ভিড় সামাল দিতে পারছে না। একটি ফেরি শিমুলিয়া ঘাটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকজন হুড়মুড় করে চেয়ার ছেড়ে উঠে পরছে। লোকজনের চাপের কারণে জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ফেরিতে উঠতে পারছে না। আবার এই ফেরিঘাট ব্যবহার করে ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ ও একেবারে কম না বলে বিআইডব্লিউটিসির ঘাট সূত্র জানিয়েছে। কঠোর লকডাউনের ঘোষণার পর দক্ষিণাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যারা এতদিন পেশাগত বদ জরুরি কাজের কারণে অবস্থান করছিলেন তারাও এখন ঢাকায় ফিরতে মরিয়া। মানুষের চাপের কারণে যানবাহন পারাপার হতে না পারায় ঘাটের উভয় দিকেই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। এই ঘাটেও যাত্রীর চাপ ভোর থেকেই কয়েকগুণ বেড়েছে। ফেরিঘাটে চলাচল করছে ১৮টি ফেরি। মানুষের ঢল নেমেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও কাঁচপুর এলাকায়। লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ এই মহা-সড়কের একাধিক স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে ছিল। ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনকে পুলিশ ঢাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ঢাকাগামী ও ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল, সিএনজি, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারগুলো ঘুরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এতেও লোকজনের যাতায়াত ঠেকানো যাচ্ছে না।