শুধু সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েল নয়, আপত্তিকরভাবে ছবি তুলে এরপর ব্লাকমেল করে গুণে গুণে ২৮ জনকে বিয়ে করেছেন মডেল-অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণা। সবার কাছ থেকেই হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। শুধু স্বর্ণা একা নন, তার এই কাজে পরিবারের প্রতিটি সদস্যই জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় রোমানা স্বর্ণাসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএমপির ডিসি হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণা, তার মা, ছেলে, ভাই ও ভাইয়ের বউ সবাই সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েলের কাছ থেকে টাকা হাতিয়েছেন। তিনি বিদেশ থেকে আসার পর বাসায় নিয়ে অচেতন করে উলঙ্গ অবস্থায় তার ছবি তোলেন স্বর্ণা ও তার পরিবারের সদস্যরা। এরপর টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।
সেই সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলামের করা প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণা এখন জেলে। তাকে আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম (সিএমএম) আদালতে তোলা হয়েছে। পুলিশ তার পাঁচ দিনের রিমাণ্ড চাইবে বলে জানা গেছে। মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রোমানা স্বর্ণাকে। পুলিশ জানায়, তিনি ফেসবুকে মডেল পরিচয়ে ফেসবুকে প্রেম করতেন প্রবাসীদের সঙ্গে। কখনো স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স আবার সংসারের আর্থিক সংকটসহ নানা কারণ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। পরে করতেন বিয়ে। এরপর কৌশলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লিখে নিতেন জায়গা-জমি। অভিনেত্রীর এই কাজে তাকে সহায়তা করতো তার গোটা পরিবার। স্বর্ণা ফেসবুকে ভিন্ন ভিন্ন আইডি খুলতেন এবং আপত্তিকর ছবি আপলোড করতেন। এরপর প্রবাসীদের টার্গেট করে ফ্রেন্ড বানিয়ে গড়ে তুলতেন প্রেমের সম্পর্ক। এরপর বিয়ে। তারপর নানা কৌশলে হাতিয়ে নিতেন গাড়ি-বাড়ি, টাকা। এরপর দেন তথাকথিত ডিভোর্স। যেমনি ভাবে নিয়েছেন সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েলের কাছ থেকে। এই ব্যক্তি বলেন, সে (রোমানা স্বর্ণা) আমার সঙ্গে প্রথমে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর লালমাটিয়ায় ফ্ল্যাট কেনার নাম করে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা নেয়। আমি দেশে আসার পর আমাকে বাসায় ডাকে। আমি যাই। তারা আমাকে কিছু একটা খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে। এরপর আমার খারাপ ছবি তুলে নেয় এবং আমাকে দিয়ে স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেয়। এভাবেই সে আমাকে জোর করে বিয়ে করে। আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে বললেও তা মিথ্যা। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’ এভাবেই বিয়ের নামে প্রতারণা করে রোমানা স্বর্ণা ও তার পরিবার ২৮ জন প্রবাসীর কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রতারণার স্বীকার হওয়া কয়েকজন। পুলিশ বলছে, এই পরিবারের প্রতিটি সদস্যই বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে একই প্রক্রিয়ায় প্রেম ও বিয়ের সম্পর্কের অভিনয় করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা।