এক হাজার এক দিন বন্দি থাকার পর সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন সৌদি মানবাধিকারকর্মী লুজাইন আল হাতলুল। মুক্তি পেয়েই সৌদি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন তিনি। জানিয়েছেন বন্দি থাকাকালে কি ধরনের পাশবিক নির্যাতন চালানো হত তার ওপর।
লুজাইনের অভিযোগ, কারাকর্মকর্তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হত তাকে। জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারা জোর করে চুম্বন করত। জেলের রক্ষীদের সঙ্গে বসিয়ে পর্নোগ্রাফিও দেখানো হত। এ ছাড়া সিলিংয়ে ঝুলিয়ে মারধর, বিদ্যুতের শকের মতো নির্যাতন তো হয়েছেই।
সৌদি আরবের অতি পরিচিত নারী সমাজসেবী লুজাইন। সমাজে নারীদের অধিকার রক্ষায় সব সময়ই প্রতিবাদ আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকেন তিনি। আন্দোলন চালিয়ে একাধিক বার গ্রেফতার হয়েছেন। জেলে নির্মম মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তা সত্ত্বেও নারীদের অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
সৌদি আরবের জেদ্দায় জন্ম তার। ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তার নাম মনোনীত হয়েছিল। ২০২০ সালে বাকলাভ হেভেন হিউম্যান রাইটস সম্মানের জন্যও তার নাম মনোনীত হয়েছে।
সৌদিতে নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার এনে দেয়া এবং পুরুষ অভিভাবকত্ব থেকে নারীদের বের করে আনার অন্যতম কৃতিত্ব তারই। এমন একজন বহুল জনপ্রিয় সমাজকর্মীর উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে সৌদির জেলে, যা নিয়ে সরব হয়েছে সারা বিশ্বই।
১০ ফেব্রুয়ারি তিনি সৌদির জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। সময়ের আগেই তাকে মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংবাদমাধ্যম তোলপাড়। জানা গেছে, জেলে তার উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছিলেন কারাকর্মকর্তা এবং অন্যান্য রক্ষীরা।
২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর প্রথম গ্রেফতার হন লুজাইন। নারীদের গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে সৌদি আরব যান গাড়ি চালিয়ে। তার কাছে লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও গ্রেফতার করে সৌদি পুলিশ। ৭৩ দিন জেলে ছিলেন তিনি।
২০১৬ সালে পুরুষ অভিভাবকত্বের বিরুদ্ধে ১৪ হাজার নারী সই সংগ্রহ করে বাদশাহ সালমানের কাছে পাঠান। ফের তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের কোনও স্পষ্ট কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে নারী এবং সমাজকর্মী হওয়ার জন্যই তাকে গ্রেফতার হতে হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে অপহরণ করা হয় লুজাইনকে। সেখান থেকে সৌদিতে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করা হয় তাকে। তখন থেকেই জেলেই ছিলেন তিনি। এ সব অবশ্য দমাতে পারেনি তাকে। তাকে যত বার গ্রেফতার করা হয়েছে, তত সামাজিক বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তিনি। আর যত সোচ্চার হয়েছেন তার মুখ বন্ধ করার প্রক্রিয়াও তত নির্মম হয়েছে।
লুজাইনের একটি আন্দোলন বড় সাফল্য পায়। ২০১৮ সালের জুনে নারীদের গাড়ি চালানো থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সৌদি প্রশাসন। জয় হয় নারীদের। লুজাইন তখনও জেলবন্দি।
জেলে থাকার সময় তাকে পরিবারের সঙ্গেও দেখা কিংবা কথা বলতে দেওয়া হত না। লুজাইনের সঙ্গে আরও কয়েক জন নারী সমাজকর্মী গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
এটা জানতে পেরে জেলেই অনশনে বসেন লুজাইন। ৬ দিন অনশনের পর তিনিও পরিবারের সঙ্গে কথা বলার অধিকার ছিনিয়ে নেন। ভিডিও কলে পরিবারের সকলের সঙ্গে কথাও বলেন। অবশেষে মুক্তি পান তিনি। সূত্র: ডিএনএ ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার