৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার | দুপুর ১:২৫ মিনিট
ঋতু : শীতকাল | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

শিরোনাম :
হিজবুল্লাহর আরেক নেতাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের হদিস নেই ইলিশের কেজি ৭০০ টাকা নির্ধারণ চেয়ে আইনি নোটিশ সিটি করপোরেশন পরিচালনায় কমিটি, কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকবেন যিনি কর্মীদের উদ্দেশে শিবির সেক্রেটারির জরুরি বার্তা ‘শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণ করা হবে, আইন ভাঙলে ব্যবস্থা’ রেমিট্যান্স নিয়ে আবারও সুখবর চাঁদাবাজির অভিযোগে সেনা বাহিনীর হাতে সোনারগাঁও উপজেলা  বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আতাউর গ্রেপ্তার বন্দরে পরিবেশ দূষণের দায়ে ব্যাটারী কারখানা বন্ধের নোটিশ সড়ক যেন অপরাধীদের কবলে ! এ যেন মরন ফাঁদ!!  মদনপুর -মদনগঞ্জ সড়ক|| পুলিশী টহল বৃদ্ধির আশ্বাস ওসির… সাবেক এমপি শামীম ওসমানের স্নেহভাজনআলীর বিএনপি নেতা হওয়ার খায়েশ পূর্বাচলের অস্ত্র উদ্ধার মামলা৭ বছরেও অস্ত্রের উৎস মেলেনি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল মধুপুরের আনারস মিরপুরে নয় কানপুরেই শেষ সাকিবের ক্যারিয়ার! অভিনেতা আলাউদ্দিন লাল মারা গেছেন পঞ্চগড়ে কুকুরের কামড়ে নার্সসহ আহত ১৪ দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচন কখন হবে সেটা রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত : জয়নুল ফারুক স্কুলে ভর্তিতে এ বছরও থাকছে লটারি শাসন পদ্ধতি শেখ হাসিনাকে দানব বানিয়েছে : জিএম কাদের

বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মতবাদ : উন্নয়ন ও প্রগতির পথনির্দেশক

ncitynews24
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯ | আপডেট: শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেননি, সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে রেখে গেছেন অর্থনৈতিক দর্শন। রক্তে ভেজা সংবিধানেই স্থান দিয়েছেন দারিদ্র্য মুক্তির পথ নির্দেশনা। বৈষম্য তাড়াতে ব্যক্ত করেছেন প্রতিশ্রুতি। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ছিলেন নির্ভীক। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দারিদ্র্য দূরের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যান বঙ্গবন্ধু। ভূমি ব্যবস্থাপনায় আমূল সংস্কার, শিল্প বিকাশে নয়া উদ্যোগ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্রদান, কৃষির আধুনিকায়নে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ, সমবায় চেতনা বিকাশে শুরু করেছিলেন কর্মযজ্ঞ। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া, মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা, নারী জাগরণ কর্মসূচি ছড়িয়ে দিতে সবসময় বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় ছিল সাধারণ জনগণ। পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় আনতে গ্রহণ করেন নানা পদক্ষেপ। উন্নয়ন ভাবনায় দর্শন বরাবরই প্রভাব বিস্তার করে। আর সেখানেই পরিস্ফুটিত হয় ভবিষ্যৎ বিকাশের রেখা। ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মতবাদ’ বইটিতে তা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন নিয়ে বিভ্রান্তির চেষ্টা চলেছে। কখনও কখনও তদানীন্তন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এর অসারতা প্রমাণের ধুম্রজাল তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের অপপ্রচারে সাময়িক জটিলতা তৈরি হলেও তা স্থায়ী হয়নি। নতুন প্রজন্ম কুয়াশা ভেদ করে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের বিষয়টি এখনও সামনে আনতে উদ্যোগী।

বইটিতে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মতবাদের বিশ্লেষণ রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে নেওয়া উদ্যোগের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন অভিষ্টও স্থান পেয়েছে বইটিতে। সাংবাদিক মুস্তফা মনওয়ার সুজন সাধারণের পাঠ উপযোগী করে তুলে এনেছেন দারিদ্র্য মুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর দর্শন। উন্নয়নশীল দেশের অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন এখনও প্রাসঙ্গিক। মৌলিক চাহিদা মেটাতে সরকারের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, সামাজিক সূচকে আমাদের কেমন অগ্রগতি অর্জন করতে হবে, বিশ্বমানের মানবসম্পদ কিভাবে গড়ে তোলা সম্ভব তার সবই রয়েছে জাতির জনকের অর্থনৈতিক দর্শনে। রাষ্ট্রীয়ভাবে দারিদ্র্য মুক্তির লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-ভাবনা শুধু বাংলাদেশেই প্রাসঙ্গিক তা নয়, পিছিয়ে পড়া অন্য জাতি ও রাষ্ট্রের জন্যে হতে পারে পথ নির্দেশিকা।

আত্মনির্ভর জাতীয় বাজেট প্রণয়নে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে কার্পণ্য করেননি বঙ্গবন্ধু। সদ্য স্বাধীন দেশের বাজেটে সেই চিত্রই উঠে এসেছে। পুনর্বাসনের পাশাপাশি নতুন অবকাঠামো তৈরিতে আত্মনিমগ্ন করেছিলো বঙ্গবন্ধুর সরকার। সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিচ্ছাপ পড়ে সরকারি নানা কর্মসূচিতে। শুধু অর্থনীতির ছাত্র বা উন্নয়ন গবেষকদেরই নয়, বইটি সাধারণকে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন সম্পর্কে আলোকিত করবে।

স্বাধীনতা দিলেন। বাঙালি জাতিকে দেশ-মানচিত্র-সংবিধান দিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আসলে কী চেয়েছিলেন? বাংলাদেশ নিয়ে কেমন স্বপ্ন দেখেছিলেন? গড়তে চেয়েছিলেন কোন বাংলাদেশ?

‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ প্রসঙ্গে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ প্রথম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বেতার ও টিভি ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার সরকার অভ্যন্তরীণ সমাজ বিপ্লবে বিশ্বাস করে। এটা কোন অগণতান্ত্রিক কথা নয়। আমার সরকার ও পার্টি বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিশ্রুবদ্ধ। একটি নতুন ব্যবস্থার ভীত রচনার জন্য পুরাতন সমাজব্যবস্থা উপড়ে ফেলতে হবে। আমরা শোষণমুক্ত সমাজ গড়বো।’

বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন ছিল এ দেশের গণমানুষের সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক গভীর মানবিক সংগ্রামী দর্শন। এ দর্শনের ভিত্তিমূলে ছিল ঐতিহাসিক বিশ্বাস, যা কেবল জনগণই ইতিহাস সৃষ্টি করে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন অনুযায়ী, গণমানুষের মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শেষ পর্যন্ত মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম হলো ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ বাংলাদেশ, যেখানে সাংবিধানিকভাবেই ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’। এ দর্শনের স্পষ্ট প্রতিফলন- তাঁর সোনার বাংলার স্বপ্ন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন, শোষণ-বঞ্চনা-দুর্দশামুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন।

বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন তাঁরই উদ্ভাবিত স্বদেশজাত উন্নয়ন দর্শনের ওপর ভিত্তি করে এমন এক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে, যে দেশ হবে সোনার বাংলা; যে বাংলাদেশে মানব-মুক্তি নিশ্চিত হবে; যে বাংলাদেশে নিশ্চিত হবে মানুষের সুযোগের সমতা; যে বাংলাদেশ হবে সুস্থ-সবল-জ্ঞান-চেতনাসমৃদ্ধ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ মানুষের দেশ।

বঙ্গবন্ধু মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে নিয়েছিলেন বহুমুখী পরিকল্পনা, দিয়েছিলেন অর্থনীতির নতুন ফর্মুলা। তাঁরই উদ্ভাবিত উন্নয়ন দর্শন বাস্তবে রূপ দিতে অন্যতম মৌল-উপাদান হিসেবে সমবায়ের অন্তর্নিহিত শক্তি পুরোমাত্রায় ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তাঁর দর্শনমতে, দেশে দরিদ্র বলে কোনো শব্দ থাকবে না। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন গ্রামীণ সমাজে সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশের প্রতিটি গ্রামে গণমুখী সমবায় সমিতি গঠন করা হবে, যেখানে গরিব মানুষ যৌথভাবে উৎপাদন যন্ত্রের মালিক হবেন; যেখানে সমবায়ের সংহত শক্তি গরিব মানুষকে জোতদার-ধনী কৃষকের শোষণ থেকে মুক্তি দেবে; যেখানে মধ্যবর্তী ব্যবসায়ীরা গরিবের শ্রমের ফসল আর লুট করতে পারবে না; যেখানে শোষণ ও কোটারি স্বার্থ চিরতরে উচ্ছেদ হয়ে যাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। ওইসব লেখায় তাঁর রাজনৈতিক জীবন ও দর্শন প্রকাশ পেয়েছে অনেকাংশে। তবে রাজনীতির এই মহাকবির আলোকিত অনেক অধ্যায় আজও অজানা। বঙ্গবন্ধুর জীবন-দর্শন নিয়ে নানা ধরনের কাজ হলেও সবসময় মনে হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, কর্মসূচি, চিন্তাধারা নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি।

তাঁর বিশাল অর্থনৈতিক দর্শন নিরীক্ষার সারমর্ম মতবাদ আকারেই উত্থাপন করা হয়েছে এ বইতে। এ মতবাদ মূলত দারিদ্র্য বিমোচনবাদ; রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়নের গাইড লাইন; আর নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সনদ। ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মতবাদ’ শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে রফতানিযোগ্য।

‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মতবাদ’ এ বর্ণিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক চিন্তা, পরিকল্পনা, কর্মসূচি, কৌশল, বাস্তবায়ন পদ্ধতি, প্রয়োগে অন্তরায়, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে উপযোগিতা। ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মতবাদ’ মিলিত মানুষ, প্রত্যেক মানুষ এবং রাষ্ট্রের প্রগতির পথনির্দেশক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।