কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) রাতের আঁধারে ওই ভাস্কর্যের ডান হাত ও পুরো মুখমণ্ডল, বাঁ হাতের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা।
আজ শনিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে শহরের বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট চত্বর ও থানা মোড়ে আওয়ামী, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করে।
জানা যায়, কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে শহরের ব্যস্ততম পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ চলছে। একই বেদিতে বঙ্গবন্ধুর তিন ধরনের তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই বেদিতে জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্যও নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের পথে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, ঘটনাস্থলে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। রাত ২টার দিকে দুজনকে দেখা যাচ্ছে তারা ভাস্কর্য ভাঙচুর করছে। তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। অচিরেই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘এ ধরনের নোংরা কাজ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে এবং মদদ দিয়েছে, তাদের প্রত্যেককেই খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তি দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, যে বা যারা ভাঙচুর করেছে তাদের কাউকে একচুলও ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে পুলিশকে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়া পৌরসভা সূত্র জানায়, শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে ২০০৩ সালে পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতীয় ফুল শাপলার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে এটি ‘শাপলা চত্বর’ হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বর্তমানে শাপলার ভাস্কর্য ভেঙে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেখানে নিচের দিকে জাতীয় চার নেতার মুর্যাল থাকবে। দরপত্রের মাধ্যমে যশোরের একজন ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম এ ভাস্কর্য নির্মাণের কার্যাদেশ পান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। ১৭ নভেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মজমপুরের দিকে মুখ করে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দেওয়ার একটি ভাস্কর্য তৈরির কাজ প্রায় শেষ দিকে। কিন্তু শুক্রবার রাতে কে বা কারা ভাস্কর্যের মুখ-হাতসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলে। কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ভাস্কর্য নির্মাণকাজের প্রায় ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছিল। ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় পৌরসভার পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’ এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, যারা আওয়ামী লীগের বিরোধী, বঙ্গবন্ধুকে যারা মানতে পারে না; তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করা হচ্ছে।’ এদিকে এ ঘটনার পর জেলার সবগুলো ভাস্কর্যে অতিরিক্ত নজরদারি শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনার পর কালেক্টরেট চত্বরসহ জেলায় যতগুলো ভাস্কর্য আছে সবগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনওদেরও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’