কালিয়াকৈর প্রতিনিধি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে স্কুলছাত্রী লিমুমনি লামিয়ার নৃশংস হত্যাকান্ডের কারণ ছয় দিনেও রয়েছে অজানা। এ ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠালেও এখনো উদ্ধার হয়নি হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ও লুন্ঠিত স্বর্ণের গহনা। সোমবার সকালে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষক-কর্মচারী ও সহপাঠীরা। এ সময় দ্রুত বিচারের দাবিতে তারা মহাসড়কে বিক্ষোভ করে। নিহত হলো, কালিয়াকৈর উপজেলার উত্তর গজারিয়া এলাকার সাহেব আলীর মেয়ে লিমুমনি লামিয়া (৯)। সে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর গোড়াই এলাকার আলোকিত হৃদয় বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। অন্যদিকে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বগুড়ার সদর থানার ফুলবাড়ি উত্তরপাড়া এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে সুমন মিয়া (২৭) ও সুমনের স্ত্রী মিলি বেগম (২২)। মানববন্ধন, নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈরে ১৭ নভেম্বর রাতে ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী লামিয়াকে জবাই করেছে তাদের বাড়ির ভাড়াটে সুমন। তাকে হত্যার পর সেফটি ট্যাংকির ঢাকনায় লাশ বেধে বাড়ির পাশের শিমুলতলী খালের পানিতে ডুবিয়ে গুমের চেষ্টাও করা হয়। লুট করা হয়েছে তার গলা, কান ও পায়ের স্বর্ণের গহনা। ময়নাতদন্ত শেষে পরের দিন ১৮ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে সেই খালের পাড়েই তাকে কবর দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বামী সুমন ও স্ত্রী মিলিকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর জেল হাজতে পাঠিয়েছে। এসময় গ্রেপ্তারকৃতদের কোনো স্বজনকে না পেয়ে পুলিশ বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের দেড় বছরের ছেলে শিশু আলিফকেও আদালতে পাঠানো হয়। এদিকে স্বর্ণালংকার লুটের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে হত্যা বা ধর্ষণের পর তাকে হত্যা অথবা টাকা-পয়সা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ তিনটি ধারণাকে প্রাধান্য দিয়ে সিআইডি, পিবিআই ও পুলিশ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহের পর তদন্ত চালিয়ে গেলেওঘটনার ছয় দিনেও নৃশংস হত্যাকান্ডের কারণ জানা যায়নি। পরে আদালত সুমনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া সুমনের স্ত্রী মিলির পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ। কিন্তু স্কুলছাত্রী লামিয়ার নৃশংস হত্যাকান্ডের কারণ ছয় দিনেও উদঘাটন হয়নি। এ ঘটনায় স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠালেও এখনো উদ্ধার হয়নি হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ও লুন্ঠিত স্বর্ণের গহনা। এদিকে ঘটনার ছয় দিনেও নৃশংস হত্যাকান্ডের কারণ উদঘাটন, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও লুন্ঠিত স্বর্ণের গহনা উদ্ধার না হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন শিশু লামিয়ার পরিবার, স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। এ কারণে পাশর্^বতী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার রনারচালা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সোমবার দুপুরে মানববন্ধন করেছে তার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান “আলোকিত হৃদয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী ও সহপাঠীরা। মানববন্ধনে নিহতের পরিবার ও কালিয়াকৈর ও মির্জাপুর থানা এলাকার স্থানীয় লোকজন অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- গোড়াই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন ভুঁইয়া ঠান্ডু, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক কাশেম দেওয়ান, আলোকিত হৃদয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানোয়ার হোসেন সজিব, সহকারী শিক্ষক শামিমা আক্তার, শাকিলা খাতুন, নিহতের বাবা সাহেব আলী, মা শামীমা বেগম, ভাই সুমন মিয়া, সহপাঠী রাতুল হোসেনসহ আরো অনেকে। এ সময় তারা এ নৃশংস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে দ্রুত বিচারের দাবিতে জানান। এছাড়া লুন্ঠিত স্বর্ণের গহনা উদ্ধারের দাবিও জানান তারা। এ সময় তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করে। মানববন্ধনে নিহতের মা-বাবা, ভাইসহ স্বজনের আহাজারিতে মহাসড়কটি ভাড়ি হয়ে উঠে। কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, গ্রেপ্তারকৃত সুমন ও তার স্ত্রী মিলিকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া স্বজনকে না পেয়ে দেড় বছরের শিশু আলিফকেও তাদের সঙ্গে পাঠানো হয়েছে। আদালত স্বামী সুমনকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন এবং সোমবার আদালতে স্ত্রী মিলির রিমান্ড শুনানি হবে। তবে এ নৃশংস হত্যার কারণ এখনো জানা যায়নি। এছাড়া সিআইডি বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে পরিক্ষা করছে। তাদের প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে হত্যার সঠিক কারণ জানা যাবে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাতে কালিয়াকৈর উপজেলার উত্তর গজারিয়া এলাকায় ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী লামিয়াকে জবাই করে হত্যার পর সেফটি ট্যাংকিরঢাকনায় লাশ বেধে খালের পানিতে ডুবিয়ে গুমের চেষ্টা করে তাদের বাড়ির ভাড়াটে সুমন। পরে পরিবারের সঙ্গে লামিয়াকে খোজতে খুনী সুমন গেলে ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য তিনি কৌশলে লাশের উপর দাড়িয়ে থাকেন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ সময় নিহতের শরীরে জামা থাকলেও পরণের পাজামা খুলা অবস্থায় ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, স্বার্ণালংকার লুট বা টাকা-পয়সা নিয়ে দ্বন্দ্ব অথবা ধর্ষণের পর তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাড়ির ভাড়াটে সুমন মিয়াকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্ত্রী মিলিকেও আটক করে পুলিশ। পরে স্ত্রী মিলিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।