প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দায়িত্বশীল ও মানবিকতার সঙ্গে সাংবাদিকদের কাজ করতে হবে। আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। দেশের প্রতি সবারই একটি দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। এ দায়িত্ববোধের সঙ্গে সবাই কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে। আমরা চাই, দেশ এগিয়ে যাক। আজ রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে অনলাইনে অংশ নেন।
তিনি বলেন, হলুদ সাংবাদিকতা যেন না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। মানুষের কল্যাণে দৃষ্টি থাকে, সে ধরনের সাংবাদিকতাই যেন হয়। আগে দুর্নীতি, অন্যায় হলে ধামাচাপা দেয়া হতো। বর্তমান সরকার তা করে না। যেখানে অন্যায় হয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের রিপোর্ট পড়েই আমরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই, অন্যায়ের প্রতিকার করি, দোষীদের শাস্তিও দেই। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। এটি করতে গিয়েও আমাদের অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারণেই আমরা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নিতে পারছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে একটি মামলা হলেই সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা যেত। এখন আমরা বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইন সংশোধন করেছি। এটিও সাংবাদিকদের কল্যাণে করা হয়েছে। আমি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি করি। মানুষের জীবনমান উন্নত করাই হচ্ছে আমার জীবনের লক্ষ্য। নীতিহীন সাংবাদিকতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমি নিজেও সাংবাদিক পরিবারের একজন সন্তান। সংবাদপত্র সমাজের দর্পণ। সমাজের দুর্নীতি ও অনিয়মগুলো সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। আমরা এগুলো দেখে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে দল বিবেচনায় আনছি না। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক ও স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, আমরা সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট, সম্প্রচার নীতিমালা, অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা করেছি। আমরাও চাই, দেশে যাতে হলুদ সাংবাদিকতা না থাকে। অসহায় ও অসচ্ছল সাংবাদিকদের জন্য সরকারের অনুদানের বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই আমরা দেশে ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি। করোনা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা, বন্যা ও দুর্যোগ মোকাবিলা করেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি করি। মানুষের জীবনমান উন্নত করাই হচ্ছে আমার জীবনের লক্ষ্য। সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় এসে দেশে হত্যা, লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে এলিট শ্রেণির শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। ২১ বছর পর আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেশকে আবার উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসি। আমরা অল্প সময়ে দেশের যে উন্নতি করেছি, ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা তা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া একটি রাজনৈতিক দল। আমরা কারো কাছে হাত পেতে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই না। আমরা জাতি হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা অর্জন করতে চাই। আমাদের এখন বিশ্ববাসী মর্যাদার চোখে দেখে। আমরা নিজেদের সম্পদ দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালের আগে দেশে মোবাইল ফোন ছিল না। আমরা সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন দিতে পেরেছি। আগের সরকারের সময়ে আধুনিক চিন্তাচেতনার অভাব ছিল। তাই তারা দেশের কল্যাণে কাজ না করে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করেছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা, বন্যা ও দুর্যোগকে মোকাবিলা করেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সরকারের সেবা কার্যক্রম দেশের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পেরেছি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য দেন।