৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার | দুপুর ২:২১ মিনিট
ঋতু : শীতকাল | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

শিরোনাম :
হিজবুল্লাহর আরেক নেতাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের হদিস নেই ইলিশের কেজি ৭০০ টাকা নির্ধারণ চেয়ে আইনি নোটিশ সিটি করপোরেশন পরিচালনায় কমিটি, কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকবেন যিনি কর্মীদের উদ্দেশে শিবির সেক্রেটারির জরুরি বার্তা ‘শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণ করা হবে, আইন ভাঙলে ব্যবস্থা’ রেমিট্যান্স নিয়ে আবারও সুখবর চাঁদাবাজির অভিযোগে সেনা বাহিনীর হাতে সোনারগাঁও উপজেলা  বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আতাউর গ্রেপ্তার বন্দরে পরিবেশ দূষণের দায়ে ব্যাটারী কারখানা বন্ধের নোটিশ সড়ক যেন অপরাধীদের কবলে ! এ যেন মরন ফাঁদ!!  মদনপুর -মদনগঞ্জ সড়ক|| পুলিশী টহল বৃদ্ধির আশ্বাস ওসির… সাবেক এমপি শামীম ওসমানের স্নেহভাজনআলীর বিএনপি নেতা হওয়ার খায়েশ পূর্বাচলের অস্ত্র উদ্ধার মামলা৭ বছরেও অস্ত্রের উৎস মেলেনি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল মধুপুরের আনারস মিরপুরে নয় কানপুরেই শেষ সাকিবের ক্যারিয়ার! অভিনেতা আলাউদ্দিন লাল মারা গেছেন পঞ্চগড়ে কুকুরের কামড়ে নার্সসহ আহত ১৪ দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচন কখন হবে সেটা রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত : জয়নুল ফারুক স্কুলে ভর্তিতে এ বছরও থাকছে লটারি শাসন পদ্ধতি শেখ হাসিনাকে দানব বানিয়েছে : জিএম কাদের

সমুদ্র সৈকতে ছবিয়ালদের দৌড়াত্মে হয়রানি হচ্ছে পর্যটক

ncitynews24.com
প্রকাশিত: রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১ | আপডেট: রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১

পরিবার-পরিজন ও স্বজন কিংবা ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে সৈকতে বেড়াতে গিয়ে সাগর পাড়ের আনন্দের মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখতে কে-না চায়। আর তাই আনন্দঘন স্মৃতি ফ্রেমে বন্দী করতে অনেকেই সৈকতে মেতে ওঠেন ফটোসেশনে। পর্যটকদের এ চাহিদাকে পুঁজি করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও কক্সবাজার সৈকতে দিনদিন বাড়ছে ছবিয়ালদের সংখ্যা।

তবে বর্তমানে এ দুই সৈকতে ফটোগ্রাফির হ-য-ব-র-ল অবস্থা। পর্যটকদের ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে হর-হামেষায় ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। কিছু অদক্ষ ও অপেশাদার ছবিওয়ালাই এসব ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। সৈকতে তাদের এমন কর্মকান্ড প্রায়শ ভ্রমণার্থীদের আনন্দ নষ্ট করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ছিন্নমূল ও অনভিজ্ঞ কিছু কিশোর স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় সৈকতে ফটোগ্রাফি করছে। এরমধ্যে অনেকেরই ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতাতো নেই বরং আদব-কায়দারও কোন বালাই নেই। একজন পর্যটকের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, কীভাবে আচরণ করতে হয় সেটাও তারা জানে না। আবার এদের মধ্যেই অনেকেই ফটোগ্রাফির আড়ালে সৈকতে পর্যটকদের মামলামাল চুরির সাথেও জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে না বলা স্বর্ত্তেও একাধিক ছবি তুলে পর্যটকদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করা তাদের নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। কোন পর্যটক টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বা এর প্রতিবাদ জানালে সিন্ডিকেটে জড়িত ১০/১২ জনের একদল জড়ো হয়ে পর্যটকদেও গায়ে হাত তোলার মতও ঘটনা ঘটছে অহরহ। সাজ্জাদুল নামে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ভাসমান বাদাম বিক্রেতা জানায়, আমি দীর্ঘদিন ধরে এ সৈকতে বাদাম ফেরি করছি। অনেকরকম চোর দেখেছি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গায়ে ফটোগ্রাফারের টি শাট ও কাঁধে ক্যামেরার ব্যাগ ঝুলানো চোর। পর্যটকরা তীরে মালামাল রেখে সমুদ্রে নামার পর সেটা গাযেব করে দিচ্ছে। তারা মূলত নাইকন বা ক্যাননের একটি ডিএসএলআর পুঁজি করে কৌশলে পর্যটকদের দামি দামি মোবাইল টাকা পয়সা ও জিনিসপত্র হাতিয়ে নিচ্ছে। এদেরকে ধরিয়ে দেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন তারা বহুত শক্তিশালী, তখন আমাকে মারবে। এ ভয়ে সাহস হয়না। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সম্প্রতি তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে দৈনিক পুর্বকোণ পত্রিকার আলোকচিত্রী ইব্রাহিম মুরাদের সাথে। ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমি পরিবার পরিজন নিয়ে আন অফিসিয়ালি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে যায়। সকালে সৈকতে নেমে আমরা আমাদের মতোই আনন্দ উপভোগ করছি। এসময় গায়ে ফট্রোগ্রাফারের টি শার্ট পড়া এবং কাঁধে ডিএসএলআর ক্যামেরা ঝুলিয়ে এক ব্যাক্তি হঠাৎ সামনে এসে বলেন টাকা দেন। আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর জানতে চাইলাম কিসের টাকা? সে উত্তরে জানায় আপনাদের প্রায় তিন শতাধিক ছবি তুলেছি ১২০০ টাকা দেন। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি আমি কি আপনাকে ছবি তুলতে বলেছি? সে তখন জোর খাটায়, গালিগালাজ করে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে। পরে আমি পরিচিত ট্যুরিষ্ট পুলিশের সহায়তা নিয়ে কোন রকমে ঝামেলামুক্ত হই। তিনি বলেন, আমি হয়তো পুলিশের সহায়তা নিয়েছি, বাড়তি ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ পর্যটকই পুলিশকে না জানিয়ে ভ্রমণের আনন্দটাই মাটি করে দিচ্ছে। তবে ছবি তোলা নিয়ে পর্যটক হয়রানি হচ্ছে তথ্যটি মানতে নারাজ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের প্রায় সকল ফটোগ্রাফার। তারা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছে পোষণ করেনি। জানা যায়, চট্টগ্রামের বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজারের অধিক পর্যটকের সমাগমঘটে। এ সংখ্যা দ্বিগুন হয় শুক্র ও শনিবারসহ সকল বন্ধের দিন। এসময় সৈকতে বেড়াতে আসা কোন এক পর্যটককে আকুতি মিনতি জানিয়ে কয়েকটি ছবি তোলার অনুমতি পেলেও ফটোগ্রাফাররা শাট শাট করে ছবি তুলে দেন ৫০টিরও বেশি। এরপর ছবি প্রিন্টের জন্য ওই পর্যটককে নামবিহীন একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে সবকয়টি ছবি প্রিন্টের জন্য চাপ দেন। কম বেশি প্রিন্ট নিয়ে লাগে বাকবিতন্ডা। সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে এসে ঠিক এ ধরনের ফটোগ্রাফারের হাতে হয়রানির শিকারের অভিযোগ প্রায়শ আসলেও কিছু ঘটনার তাৎক্ষণিক সমাধান হয়, অধিকাংশই কুল-কিনারাই পাওয়া যায় না। এসবের মূল কারণ মওসুমি ও অপেশাদার ফটোগ্রাফার। তাই পেশাদার ফটোগ্রাফার চিহ্নিতকরণ ও পর্যটক হয়রানি রোধে ডাটাবেজের তৈরির উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। সৈকতে ফটোগ্রাফারদের প্রতারণা এড়াতে ২০১৭ সালের জানুয়ারির দিকে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের পেশাদার ফটোগ্রাফারদের ডাটাবেজের আওতায় আনা হয়। তাতেও অভিযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভ্রাম্যমান ফটোগ্রাফারদের শৃঙ্খলা ও অনুশাসনের অধীনে আনতে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ফের উদ্দ্যেগ নেয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশিদ জানান, সৈকতে ফটোগ্রাফারদের হাতে কোন পর্যটক হয়রানির শিকার হলে তাৎক্ষনিক ০১৭৩৩৩৭৩১২৭ এ নাম্বারে অভিযোগ করতে পারেন। তাছাড়া সৈকতে ফটোগ্রাফি করতে নিয়ামাবলি সম্পর্কে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয় ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিউটি অফিসার এবং প্রয়োজনীয় মোবাইল নাম্বার ও ফেসবুক পেইজের ঠিকানা সংযোজিত টি-শার্ট পড়েই ফটোগ্রাফিং করতে হবে ফটোগ্রাফারদের। সৈকতে ছবি তোলার সময় ডাটাবেজের অনুকূলে ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃক ইস্যু করা সব তথ্যসম্বলিত পরিচিতি কার্ডটি গলায় ঝুলাতে হবে। একই সাথে ওই পোশাকের গায়ে ছবির তোলার মূল্য সংযোযিত থাকতে হবে। তাছাড়ও পর্যটকের সঙ্গে ‘এক্সকিউজমি’, ‘থ্যাংকইউ’, ‘প্লিজ’ ও ‘সরি’ এই চারটি শব্দ ব্যবহারের অভ্যাস করতে হবে ফটোগ্রাফারদের। সৈকতে ছবিওয়ালাদের হাতে হয়রানির অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষনিক তা সমাধান করার চেষ্টা করেন বলে মন্তব্য করেছেন পতেঙ্গা সৈকত ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ এনামুল হক। বলেন, হয়রানি কমাতে সবসময় আমাদের চারটি দল প্রতিনিয়ত সৈকতে টহল দেয়।   পতেঙ্গা ট্যুরিস্ট পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এ সৈকতে জানা মতে ২২০ জন ভ্রাম্যমাণ ফটোগ্রাফার রয়েছেন। তবে সৈকতে গেলে দেখা যায় এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি।