সমালোচনায় কান না দিয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে কী বলল, কে কী লিখলো ওইদিকে কান দিলে কোনো কাজ করতে পারবেন না। নিজের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে, নিজের ওপর আস্থা থাকতে হবে। আপনি সঠিক কাজটি করছেন কিনা। আস্থাটা থাকলে কাজের ফল দেশবাসী পাবে, দেশের মানুষ পাবে। আজ বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ আয়োজিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
সরকারি কাজে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নে আগামী এক বছর মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে, আজ সপ্তমবারের মতো সেই চুক্তি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ সময় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চুক্তি বাস্তবায়ন ও শুদ্ধাচার চর্চায় শীর্ষস্থান অর্জন করা মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে পুরস্কৃত করা হয়। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক সমালোচনা অনেকে অনেক কিছু করে। কিন্তু আমি মনে করি যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এবং সেই সময় তাৎক্ষণিকভাবে যে কাজগুলো করার দরকার ছিল, সেটা কিন্তু যথাযথভাবে করা হয়েছে বলেই এই কোভিড-১৯ কে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এই মহামারীর মধ্যেও যে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে, আর তা করতে গিয়ে অনেকের যে মৃত্যুও হয়েছে, সে বিষয়টি সবাইকে ‘মাথায় রাখতে’ অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। সমালোচকদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে এক শ্রেণির লোক থাকে, তারা সমালোচনা করাটাই অভ্যাস। পান থেকে চুন খসলে অনেক কথা বলবে, কিন্তু নিজেরা কিছু করবে না। আর আমি তো বেসরকারি টেলিভিশন অনেক দিয়ে দিয়েছি, তার পরে আছে বিদ্যুৎ। আর এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। এরা এক সময় সমালোচনা করেছিল, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশেই আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার তারা চালাতে থাকবে সেটা বলুক।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ আসবে, দুর্যোগের জায়গাই বাংলাদেশ। কিন্তু সেই দুর্যোগ মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের অর্থনীতি যাতে কোনোরকম বাধাগ্রস্ত না হয় বা গতিশীল থাকে আমরা যে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো দেওয়া শুরু করলাম এটা কিন্তু পৃথিবীর কোনো দেশ আমাদের আগে দিতে পারেনি। আমরাই প্রথম। অর্থ মন্ত্রণালয় সাধারণত কিছু দিতে গেলে তো হাত টেনে রাখে, কিপটেমি করে। এবারে কিন্তু কিপটেমি করেনি। সবাইকে হাত খুলে যেখানে যেটা দরকার আমরা দিয়ে দিয়েছি। সেভাবে দেওয়া হয়েছে বলেই আজকে আমাদের প্রণোদনা প্যাকজে দিলাম, এ প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ার ফলে আমাদের অর্থনীতির চাকাটা সচল থেকেছে। ডিজিপির প্রায় ৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ হিসাবে দিয়েছি। নগদ টাকা দিয়েছি। সরকারি টাকার বাইরে আমি নিজে অর্থ সংগ্রহ করে সহায়তা দিয়েছি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে বিভিন্ন সহায়তার কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ আমরা পালন করবো এই কর্মসূচি নিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা যেভাবে করতে চেয়েছিলাম সেভাবে পারলাম না। কিন্তু সেই সঙ্গে সীমিত আকারে করলেও আমাদের লক্ষ্যটা হলো, আমরা আমাদের পার্টি থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা এক কোটি বৃক্ষরোপণ করবো। আবার সরকারিভাবেও সিদ্ধান্ত দিয়েছি বৃক্ষরোপণের। পাশাপাশি প্রত্যেকটা গৃহহারা মানুষ ভূমিহীন মানুষদের গৃহ নির্মাণ করে দেবো। এ বিষয়ে অনুরোধ করবো যারা একেবারে ভূমিহীন, গৃহহীন তাদের আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। একটি মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না। সবাইকে আমরা অন্তত একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেবো। এই ব্যবস্থাটা আমাদের করতে হবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, আল্লাহর রহমতে সেটা আমরা এই বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে পারবো, এই বিশ্বাস আমার আছে।