শীগ্রই অবৈধ ইটভাটার অপসারণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে-ইসমত আরা
পরিবেশের ‘গলার কাটা’ শতাধিক অবৈধ ইটভাটা
শুষ্ক মৌসুম এলে নারায়ণগঞ্জে বায়ুদূষণের মাত্রা অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে জেলার অবৈধ ইটভাটার উপর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু মৌসুম ফুরালেই আবারো সেই বায়ুদূষণ চলতে থাকে। ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যে পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩ (সংশোধিত-২০১৯)-এর ৪ ধারা অনুযায়ী ইটভাটা চালুর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। তবে আইন থাকলেও আইনের তোয়াক্কা না করে ছাড়পত্র ছাড়া জেলাজুড়ে গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাটা। নদীর পাড়ে ও ফসলি জমিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে চলছে এসব ভাটা। প্রশাসনের কঠোরতার অভাবকে পুঁজি করে ‘অবৈধ’ ইটভাটা চলছে বছরের পর বছর।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ইটভাটা চালুর পূর্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি স্থানীয় ভূমি অফিস, জেলা প্রশাসন সহ কয়েকটি সরকারি সংস্থার ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হয়। তালিকা অনুয়ায়ী নারায়ণগঞ্জে ২৯৪টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ১২৮টি ইটভাটা ছাড়পত্রবিহীন অবৈধভাবে ব্যবসা করছে। তবে নবায়ন ছাড়া অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা আরও বেশি। এসব অবৈধ ইটভাটার মধ্যে সর্বাধিক ইটভাটা রয়েছে সদর ও রূপগঞ্জ উপজেলায়। পুরো জেলার মধ্যে অবৈধ ইটভাটা সদর উপজেলায় রয়েছে ৩৯টি, রূপগঞ্জে ৬৯টি, আড়াইহাজারে ৭টি, বন্দরে ১২টি, সোনারগাঁয়ে ১টি।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, বিগত দুই বছরে অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা পরবর্তী ২৩টি মামলা করা হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয় ২ কোটি ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জরিমানা করা হয় ১ কোটি ৯২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও কিছুদিনের মধ্যে আবারও চালু হতে হয় অধিকাংশ ইটভাটা। কড়া হুঁশিয়ারি, জরিমানা ও মামলা করেও এসব ইটভাটা বন্ধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসন।
জেলার সদর, বন্দর, রূপগঞ্জ উপজেলার ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন সাময়িক জরিমানা করলে বা চিমনি ভেঙে দিলেও কয়েক দিনের মধ্যেই আবারও ইটভাটা প্রস্তুত হয়ে যায়। বেশির ভাগ ইটভাটায় কাঠ, গাড়ির পুরাতন টায়ার, রাবার ও প্লাস্টিকের পোড়ানো হয়, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।
মানব দেহে অবৈধ ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোয়ার ক্ষতিকর প্রভাব জানিয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের দূষিত বায়ুর বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জেনেছি। দূষিত বায়ুর মারাত্মক পড়ছে মানুষের শরীরে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের উপর দূষিত বায়ুর সর্বাধিক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য ইট প্রস্তুত করতে হবে। তবে বর্তমানে যে পদ্ধতিতে ইট তৈরি হয় , এরফলে প্রচুর পরিবেশ দূষণ হয়। ইটের ভাটার বিষাক্ত বায়ু থেকে রক্ষায় সরকারের নির্দেশিত আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ইট প্রস্তুত করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন এ বিষয়ে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে ইটভাটার সংখ্যা তিনশ এর কাছাকাছি। নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের জনবল সংকট রয়েছে, তবুও আমরা আমাদের সাধ্যমত অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে নিচ্ছি। কিন্তু আমরা ইটভাটার চিমনি ভেঙ্গে দিয়ে আসলে ইটভাটার মালিকেরা সপ্তাহখানেকের মধ্যে আবার গড়ে তুলে। আর আমদের জনবল এতোটাই কম যে নিয়মিত পরিদর্শনের আওতায় একটা ইটভাটা পরিদর্শন করে পর্যায়ক্রমে পরবর্তীতে সেটা পুনরায় পরিদর্শন করতে আমাদের বছর পেরিয়ে যায়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইসমত আরা জেলাব্যাপী অবৈধ ইটভাটার প্রসঙ্গে বলেছেন, আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নিয়মিত পরিদর্শন করে তালিকাভুক্ত অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমাদের কার্যক্রম চলছে, শীগ্রই অবৈধ ইটভাটার অপসারণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।