রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছেন।
মঙ্গলবার বিকেল ৩ টার দিকে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আপিল করা হয়। মিন্নির পক্ষের আইনজীবী জেড আই খান পান্না বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গতকাল সোমবার সকালে মিন্নিসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামির ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড কার্যকর সংক্রান্ত অনুমোদন) নথি হাইকোর্ট প্রশাসনে পৌঁছে। আইনজীবীরা জানান, ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন তখন ওই দন্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠান। ওই নথির ভিত্তিতে পরবর্তী বিচার কার্যক্রম চলে। এটিকে বলা হয়, ‘ডেথ রেফারেন্স’। সরকারপক্ষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আদালতে আবেদন জানান। অন্যদিকে আসামিপক্ষও বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল কিংবা জেল আপিল করেন। উভয়পক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। এর আগে বিচারিক আদালতের মামলার নথি হাইকোর্টে এলে ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক প্রস্তুত হলে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। গতকাল সোমবার মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে জেড আই খান পান্নার চেম্বারে আসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, মোবাইলে একদিন কথা হইছিল মিন্নির সঙ্গে। ফিজিক্যালি দেখা হয়নি। ওইদিন মিন্নি কথাই বলতে পারেনি। কান্নায় ভেঙে পড়েছে। ‘ও আব্বু’ বলার পর আর কোনো কথাই বলতে পারেনি সে।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে ৬ জনকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন। একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড দেন। বাকি ৪ আসামিকে খালাস দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বী আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজোয়ান আলী খাঁন হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান এবং আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। খালাসপ্রাপ্তরা হলো- মো. মুসা (পলাতক), রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স একাডেমির সামনে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সহযোগীরা। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়ায় চার্জশিটে তাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ঘটনার পর ২ জুলাই বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় প্রধান আসামি নয়ন বন্ড (২৫)।