দেশে জ্বালানি তেলের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ দাম বাড়ার পর আজ শনিবার সকাল থেকে ঢাকার বহু পেট্রলপাম্প বন্ধ রয়েছে। আর তেলের অভাবে প্রায় ৭০ শতাংশ কম গণপরিবহন শহরের রাস্তায় নেমেছে বলে জানিয়েছেন যাত্রী ও চালকেরা।শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের যুক্তিতে দাম বাড়ানো সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার।
এতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। লিটার প্রতি পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। অকটেনের দাম বেড়েছে ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা।শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে ভোক্তা পর্যায়ে নতুন এই মূল্য কার্যকর হয়েছে।বাংলাদেশ পেট্রোপাম্প মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেছেন, পাম্পগুলোয় থাকা জ্বালানি তেলের ডিসপেনসার মেশিনগুলোয় নতুন মূল্য বসানোর জন্য সময় নেয়া হচ্ছে।তিনি বলেন, ‘আমাদের মেশিনগুলোয় পুরনো দাম রয়েছে, সেখানে নতুন মূল্য বসাতে মেশিন রিসেট করতে হচ্ছে, এ জন্য এ সময় নিচ্ছি আমরা।’াজমুল হক বলেছেন, শনিবার বিকেল তিনটা নাগাদ খুলে যাবে সব পেট্রলপাম্প।তবে এ মুহূর্তে ২০ শতাংশের মতো পাম্প খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। ঢাকা শহরের ভেতর প্রায় ৪০০-এর মতো পেট্রলপাম্প রয়েছে।দাম বাড়ার খবরে পেট্রলপাম্পে অস্থিরতা
বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে মধ্যরাতে শহরের পেট্রলপাম্পগুলোতে মানুষের অস্বাভাবিক ভিড় জমে যায়। সরকারি ঘোষণায় ৫ অগাস্ট রাত ১২টার পর (৬ অগাস্ট) থেকে জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর হয়। ওই ঘোষণার পরই মানুষ পাম্পে ছোটেন।ভিড় সামলাতে এবং বিক্ষুব্ধ মানুষের চাপে ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাম্প বন্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি সামলাতে ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় পেট্রোলপাম্পে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার খবরে কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।শুক্রবার রাতে ঢাকায় কয়েকটি পেট্রলপাম্প ঘুরে দেখা যায়, সব কটিতেই ছিল অস্বাভাবিক ভিড়।দীর্ঘ সারিতে দাড়িয়ে শত শত মানুষ যেন শেষবারের মত পুরনো দাম তেল কিনে নিতে চাইছিলেন।পাম্পগুলোয় সব ধরনের যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য।যানচালকদের অভিযোগ, হঠাৎ তেলের দাম বাড়ানোর খবরে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার পর পাম্প-মালিক ও কর্মচারীরা তেল বিক্রি বন্ধ করে দেন। অনেকে পাম্পগুলোর আলো নিভিয়ে বন্ধ করে দিয়ে চলে যান।এতে জ্বালানি তেল নিতে আসা মোটরসাইকেল ও যানবাহনের চালক এবং আরোহীদের তোপের মুখে পড়েন পাম্পের শ্রমিক ও কর্মকর্তারা। এ নিয়ে অনেক জায়গাতেই বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির নাজমুল হক দাবি করেছেন, ঢাকার অনেক পাম্পে শুক্রবার রাতে পাম্পের শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের সাথে মারামারি এবং ভাঙচুর করেছেন বিক্ষোভকারীরা।রাজশাহীতে সড়ক অবরোধ
রাজশাহী শহর এবং এর আশপাশের এলাকায় ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এমন পেট্রলপাম্পগুলো শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বন্ধ করে দেয়া হয়।রাজশাহীর সাংবাদিক আনোয়ার আলী হিমু জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার খবরে এসব পাম্পে ভিড় জমান যান চালকেরা।তিনি জানিয়েছেন, শহরের মতিহারের কাজলা এলাকায় যেখানে শিক্ষার্থীরা থাকেন, তার আশপাশের পেট্রলপাম্পগুলোতে ভিড় জমান বহু মানুষ।কিন্তু ভিড় দেখে পেট্রলপাম্প মালিক-কর্মচারীরা বাতি নিভিয়ে দিয়ে পাম্প বন্ধ করে দেন।এতে ক্ষুব্ধ মোটরসাইকেল চালকেরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। তাদের ব্যারিকেডে প্রায় এক ঘণ্টার মতো যান চলাচল বন্ধ ছিল।
রাত সাড়ে ১১টার পর পুলিশ এসে পেট্রলপাম্প মালিককে জ্বালানি তেল সরবারহে বাধ্য করে। এরপর অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।চট্টগ্রামে বাস চালাবে না পরিবহন মালিকদের একটি অংশ
চট্টগ্রামেও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহন মালিকদের সংগঠনগুলোর একটি চট্টগ্রাম শহরে শনিবার থেকে বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ বিষয়ে সব সংগঠন মিলে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন।তবে বড় ধররে বিক্ষোভ হয়নি চট্টগ্রাম শহরে।এদিকে, সিলেট শহরের কয়েকটি পাম্প আগে আগে বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে মোটরসাইকেল চালকেরা বিক্ষোভ করেছেন, পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের প্রায় সব ফিলিং স্টেশন শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন কয়েকশ গ্রাহক।জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার খবরে সাতক্ষীরায় পাম্প মালিকেরা নির্ধারিত সময়ের আগে পাম্প বন্ধ করে দেয়ায়, মোটরসাইকেল চালকেরা সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ করে রাখেন।
তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা