যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার লভেন শহরে বসবাস করা এক বাংলাদেশি নারী পুলিশকে ফোন করেও স্বামীর হাত থেকে বাঁচতে পারলেন না। পুলিশের সঙ্গে কথা বলা অবস্থায়ই তাকে গুলি করেন ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে প্রতিবেশি এক বাংলাদেশি প্রবাসী জানিয়েছেন।
স্বামী-স্ত্রী দুজনের বাড়িই বাংলাদেশের মাগুরা সদরে। যেভাবে ঝামেলার শুরু আবুল আহসান হাবিব নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার স্ত্রী সৈয়দ সোহেলি আক্তারের দীর্ঘদিন সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। একটি পার্লার চালানো সোহেলি গত কয়েক বছরে আর্থিকভাবে বেশ স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন। আহসান কাজ করতেন দোকানে। লভেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির একাধিক প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্ত্রীকে নিয়ে আহসান সারাক্ষণ অভিযোগ করতেন। দুই ছেলের দিকে খেয়াল রাখতেন না। কিন্তু স্ত্রী এই অভিযোগকে কখনোই পাত্তা দেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাংলাদেশি নারী এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আহসান এক সপ্তাহ আগে তার ক্যানসারের কথা জানতে পারেন। কিন্তু পরিবারের কাছে গোপন রাখেন। রবিবার রাতে স্ত্রীর সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। দুজনে মারামারিও করেন। পরে স্ত্রী পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানান। পুলিশ আসর আগ মুহূর্তে আহসান বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। পুলিশ সদস্যরা ৪২ বছর বয়সী সোহেলি এবং তার বড় ছেলেকে কিছু পরামর্শ দিয়ে বিদায় নেন। আহসান ওই সময় পাশে লুকিয়ে ছিলেন। পুলিশকে চলে যেতে দেখে ঘরে ঢোকেন। সোহেলি আবার জরুরি নম্বরে ফোন করে স্বামীর আসার খবর জানান। অ্যারিজোনার সবচেয়ে বড় ডমেস্টিক ভায়োলেন্স সেন্টারের সিইও মরিয়াহ মাহুন জানিয়েছেন, পুলিশ সদস্যরা ফোনে কথা বলার সময় গুলির শব্দ পেয়ে দ্রুত রওনা দেন। ঘটনাস্থলে এসে দুজনকেই মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তারা। পুলিশের ধারণা, আহসান স্ত্রীকে গুলি করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। বন্দুক কেনা হয় এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা বলছেন আহসান সপ্তাহ খানেক আগে বন্দুকটি কিনেছিলেন। কিন্তু এতদিন সেটি লুকিয়ে রাখেন। স্ত্রীকে খুন করার আগে এক সহকর্মীর কাছে তিনি ক্ষমা চেয়ে যান। সেই সহকর্মী এই প্রতিবেদককে সোমবার সকালে বলেন, ‘‘আহসান ভাই শনিবার আমাকে ফোন করেন। বলেন, ‘আমার ক্যানসার হয়েছে। হয়তো বেশিদিন বাঁচব না। ক্ষমা করে দিয়েন।’ আমি শুরুতে তার কথা আমলে না নিয়ে শান্ত হতে বলি। পরে তিনি ফোন কেটে দেন।’’ অ্যারিজোনার ডমেস্টিক ভায়োলেন্স সেন্টারের কর্মকর্তারা এমন ঘটনার জন্য লকডাউনকে দায়ী করছেন। মরিয়াহ মাহুন বলেন, ‘গত কয়েক মাসে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। মানুষ এক ঘরে থাকলেও হৃদয়ে হৃদয় থাকছে না!’