পরমাণু ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা দীর্ঘদিনের। এমনকি এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটির ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে রেখেছে। এই পরিস্থিতিতে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নতুন আরও একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে ইরান।এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান নতুন করে একটি পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করেছে বলে দেশটির পরমাণু শক্তি সংস্থা শনিবার জানিয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খুজেস্তানে এই নতুন পরমাণু কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
এএফপি বলছে, ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি খুজেস্তানের দারখোভিন জেলায় ৩০০ মেগাওয়াট কারুন পাওয়ার প্ল্যান্টের নির্মাণ কাজ শুরুর কথা টেলিভিশনে দেওয়া বক্তৃতায় ঘোষণা করেছেন।রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তিনি আরও বলেন, প্ল্যান্টটি নির্মাণে সাত বছর সময় লাগবে এবং এতে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।মোহাম্মদ ইসলামি বলছেন, পাওয়ার প্ল্যান্টটি ‘প্রথমে একটি ফরাসি কোম্পানির মাধ্যমে নির্মাণ করার কথা ছিল’, কিন্তু ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর সংস্থাটি তার ‘প্রতিশ্রুতি’ থেকে পিছিয়ে যায়। পরবর্তীতে, নিষেধাজ্ঞার কারণে অন্যান্য দেশও ইরানের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক এড়িয়ে যায়।এরপর ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত হওয়া যুগান্তকারী সেই পরমাণু চুক্তির অধীনে ইরান তার ফোর্দো পারমাণবিক প্ল্যান্টকে বন্ধ রাখতে সম্মত হয়। একইসঙ্গে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে ইরানের পারমাণবিক কার্যকলাপের ওপর বিধিনিষেধের অংশ হিসাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ৩.৬৭ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখতে সম্মত হয়েছিল তেহরান।
যদিও পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চাওয়ার বিষয়টি বারবারই অস্বীকার করেছে তেহরান। চুক্তি স্বাক্ষরের পর সেসময বড় শক্তিধর দেশগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে সম্মত হয়েছিল।কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ঐতিহাসিক এই চুক্তিটি ভেঙে পড়ে। এমনকি চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইরানকে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করতে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প।ট্রাম্পের সেই সিদ্ধান্তের পর ইরান তার ফোর্দো প্ল্যান্ট পুনরায় চালু করেছে এবং গত মাসে জানায়, তারা সেখানে ৬০ শতাংশ হারে ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করেছে। এছাড়া বুশেহরে পৃথক একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও রয়েছে। সেখানে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।