বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি যুগের নায়ক, দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার মোনেম মুন্নার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে শুক্রবার। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জের বন্দর কবরস্থানে মোনেম মুন্নার কবরে ফুল দিয়েছে কয়েকটি সংগঠন। এ ছাড়া পৈতৃক বাড়িতে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
দুটি অনুষ্ঠানেই ছিল মোনেম মুন্নার পরিবারের লোকজন, বন্ধুমহল আর স্থানীয় ফুটবলারদের একটি অংশ। মৃত্যুবার্ষিকীতে দেখা যায়নি কোনো তারকা ফুটবলার বা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাউকে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যে আওয়ামী যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক পদে ছিলেন তিনি। সেই সংগঠনেরও কেউ আসেনি মোনেম মুন্নার মৃত্যুদিবসে। এক প্রকার সাদামাটাভাবে পালন হয়েছে দেশের ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি মোনেম মুন্নার মৃত্যুবার্ষিকী।
২০০৫ সালের এই দিনে না ফেরার দেশে চলে যান এই তারকা। মোনেম মুন্না ১৯৯৯ সালের রোজায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান। সেখানেই তার কিডনি সমস্যা ধরা পড়ে। পরের বছর মার্চে ব্যাঙ্গালোরে বোন শামসুন নাহার আইভীর কিডনি তার দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়।
২০০৫ সালের ২৬ জানুয়ারি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে আর বাড়ি ফেরা হয়নি এই কিংবদন্তির।
১৯৮১ সালে পাইওনিয়ার লীগ দিয়ে ফুটবলে অভিষেক মোনেম মুন্নার। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে পেশাদার ফুটবলে উত্থান। প্রথম দুই মৌসুম মুক্তিযোদ্ধায়, এরপর এক মৌসুম ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলেন।
১৯৮৬ সালে সিউল এশিয়ান গেমসে প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন। এরপর দু-একটি ম্যাচ বাদ দিলে টানা ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেছেন এই ডিফেন্ডার। ১৯৮৭ সালে তিনি যোগ দেন ঢাকা আবাহনীতে। সেখানেই গড়ে তোলেন নিজের ফুটবল ক্যারিয়ার। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আবাহনীর সঙ্গেই জড়িয়ে ছিলেন।
১৯৯১ মৌসুমের দলবদলে মুন্না আবাহনীতে খেলেছিলেন সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পারিশ্রমিকে। সে সময় প্রভাবশালী ম্যাগাজিন বিচিত্রার কাভারও হয়েছিলেন এই তারকা।
১৯৯০ সালে বেইজিং এশিয়ান গেমসে মুন্না প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান। তার নেতৃত্বেই ১৯৯৫ সালে মিয়ানমার থেকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতে ঘরে ফেরে লাল-সবুজরা। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে যা প্রথম সাফল্য।
‘হি ওয়াজ মিসটেকেইনলি বর্ন ইন বাংলাদেশ’ মোনেম মুন্না সম্পর্কে এ কথাটি বলেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক জার্মান কোচ অটো ফিস্টার। সেই অটো ফিস্টার, যিনি ঘানাকে বিশ্ব যুব কাপের শিরোপা এনে দিয়েছিলেন, সেই ফিস্টার যিনি আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত দেশ টোগোকে বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে নিয়ে গিয়েছিলেন।
তার ছোট ভাই মকবুল হোসেন রতন বলেন, ‘মোনেম মুন্নার জন্য আমাদের দেশে দৃশ্যমান তেমন কিছু করা হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের তথা ওপার বাংলাসহ দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল অঙ্গনে মুন্নার অবদান ভোলার মতো নয়। আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে মুন্নার অস্তিত্ব নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। মুন্নার স্মরণে ধানমন্ডির ৮ নম্বর সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে। মোনেম মুন্না সেতু যেটা আমরা অনেকেই জানি না। আর জানবই বা কীভাবে? অযত্নে-অবহেলায় ফলক চোখ এড়িয়ে যায়’।