মঞ্চ ও টেলিভিশনে তার অভিনয় মুগ্ধ করেছে তিন দশকের দর্শক। এক দশক ধরে তিনি নির্মাতা হিসেবেও নির্মাণের মুন্সিয়ানার প্রমাণ রেখেছেন। নাটক নির্মাণের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণেও তিনি পেয়েছেন সাফল্য। বলছি সবার প্রিয়মুখ তৌকীর আহমেদের কথা। গত মাসে ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমা দিয়ে তিনি রাঙিয়ে দিয়েছেন দর্শকের মন।
আজ মঙ্গলবার (৫ মার্চ) এই অভিনেতা-পরিচালকের জন্মদিন। গতকাল রাত ১২টার পর থেকেই পরিবার, প্রিয়জন আর বন্ধুদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি। তবে জাগো নিউজকে তৌকির জানান, ‘এবারের জন্মদিনের প্রথম শুভেচ্ছাটি পেয়েছি স্ত্রী বিপাশা হায়াত, মেয়ে আরিশা আহমেদ ও ছেলে আরীব আহমেদের কাছ থেকে। গেল কয়েক বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে।’
জন্মদিনের কোনো বিশেষ আয়োজন আছে কি না জানতে চাইলে তৌকীর আহমেদ বলেন, ‘তেমন কোনো আয়োজন নেই। পরিবার ও কাছের মানুষদের নিয়ে ঘরোয়া আয়োজনের মধ্যেই কাটছে আজকের দিনটা।’
তৌকীর আহমেদের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৫ মার্চ। তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি সম্পন্ন করেন। তারপর তিনি স্থাপত্যে স্নাতক অর্জন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল এবং প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে।
তৌকীর আহমেদ ১৯৯৯ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন নন্দিত মডেল, অভিনেত্রী ও চিত্রশিল্পী বিপাশা হায়াতকে। সেই সুখের দাম্পত্য জীবন আলোকিত করে রেখেছে তাদের এক কন্যা মেয়ে আরিশা আহমেদ ও পুত্র আরীব আহমেদ। তার শ্বশুর কিংবদন্তি অভিনেতা আবুল হায়াত। শ্যালিকা অভিনেত্রী নাতাশা হায়াত। নাতাশাকে আবার বিয়ে করেছেন আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা শাহেদ শরীফ খান।
স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করলেও অভিনয় ও নির্মাণের স্বপ্ন ছিলো তৌকীরের হৃদয়ের গহীনে। তাই নিজেকে তিনি ছাত্রাবস্থাতেই তৈরি করেছিলেন মঞ্চে। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে পড়াকালীন তিনি মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন। এরপর ১৯৯৫ সালে লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট থিয়েটার থেকে মঞ্চ নাটক পরিচালনার প্রশিক্ষন নেন এবং ২০০২ সালে নিউইয়র্ক ফিল্ম অ্যাকাডেমি থেকে চলচ্চিত্রে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।
তৌকীর আহমেদ আশির দশকের মাঝামাঝিতে বিটিভি’তে প্রচারিত নাটকসমূহের রোমান্টিক চরিত্রের শীর্ষ অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক ‘নদীর নাম মধুমতী’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর তিনি তার শ্বশুর আবুল হায়াত পরিচালিত প্রথম নাটক ‘হারজিত’-এ অভিনয় করেন। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন তার স্ত্রী বিপাশা হায়াত।
পরবর্তীতে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত দেশ বিভাগের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘চিত্রা নদীর পারে’ (১৯৯৯) এবং সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত বিখ্যাত উপন্যাস লালসালু অবলম্বনে নির্মিত ‘লালসালু’ (২০০১) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়াও তিনি নিজের পরিচালিত ‘জয়যাত্রা’ ছবিতে ট্রাক ড্রাইভারের চরিত্রে অভিনয় করেন।
২০০০ সালের পরপর অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নাট্য ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে ২০০৪ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘জয়যাত্রা’ পরিচালনার মাধ্যমে। চলচ্চিত্রটি আমজাদ হোসেন রচিত ‘একই’ নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। এই চলচ্চিত্র পরিচালনার মাধ্যমে তিনি ২০০৮ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক, শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন।
২০০৬ সালে মুক্তি পায় তার চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় চলচ্চিত্র ‘রূপকথার গল্প’। চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং দর্শকদের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। ২০০৭ সালে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘দারুচিনি দ্বীপ’। রিয়াজ অভিনীত চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সাতটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। চলচ্চিত্রটি বালি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এ প্রদর্শিত হয় এবং দর্শকদের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।
দীর্ঘ আট বছর বিরতির পর ২০১৬ সালে মুক্তি পায় শহীদুজ্জামান সেলিম, মোশাররফ করিম ও নিপুনকে নিয়ে তৌকীরের চতুর্থ চলচ্চিত্র ‘অজ্ঞাতনামা’। অবৈধ পথে বিদেশগামী মানুষের করুণ পরিণতির গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিটি দর্শক মহলে দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। ছবিটি কান উৎসবসহ দেশ-বিদেশের নানা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়ে সুনাম অর্জন করেছে।
এরপরের ছবি ‘হালদা’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১৭ সালে। হালদা নদী আর এই নদীকে ঘিরে কিছু মানুষের জীবনের গল্প নিয়ে ছবিটি। এর আগে তিনি তৈরি করেন ‘অজ্ঞাতনামা’। ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ মুক্তি পায় তার ‘ফাগুন হাওয়ায়’। বেশ প্রশংসিত হয়েছে ছবিটি।