৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার | সন্ধ্যা ৭:৫৪ মিনিট
ঋতু : শীতকাল | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

শিরোনাম :
হিজবুল্লাহর আরেক নেতাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের হদিস নেই ইলিশের কেজি ৭০০ টাকা নির্ধারণ চেয়ে আইনি নোটিশ সিটি করপোরেশন পরিচালনায় কমিটি, কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকবেন যিনি কর্মীদের উদ্দেশে শিবির সেক্রেটারির জরুরি বার্তা ‘শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি পূরণ করা হবে, আইন ভাঙলে ব্যবস্থা’ রেমিট্যান্স নিয়ে আবারও সুখবর চাঁদাবাজির অভিযোগে সেনা বাহিনীর হাতে সোনারগাঁও উপজেলা  বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আতাউর গ্রেপ্তার বন্দরে পরিবেশ দূষণের দায়ে ব্যাটারী কারখানা বন্ধের নোটিশ সড়ক যেন অপরাধীদের কবলে ! এ যেন মরন ফাঁদ!!  মদনপুর -মদনগঞ্জ সড়ক|| পুলিশী টহল বৃদ্ধির আশ্বাস ওসির… সাবেক এমপি শামীম ওসমানের স্নেহভাজনআলীর বিএনপি নেতা হওয়ার খায়েশ পূর্বাচলের অস্ত্র উদ্ধার মামলা৭ বছরেও অস্ত্রের উৎস মেলেনি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল মধুপুরের আনারস মিরপুরে নয় কানপুরেই শেষ সাকিবের ক্যারিয়ার! অভিনেতা আলাউদ্দিন লাল মারা গেছেন পঞ্চগড়ে কুকুরের কামড়ে নার্সসহ আহত ১৪ দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচন কখন হবে সেটা রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত : জয়নুল ফারুক স্কুলে ভর্তিতে এ বছরও থাকছে লটারি শাসন পদ্ধতি শেখ হাসিনাকে দানব বানিয়েছে : জিএম কাদের

নারীদের অধিকার আদায়ে শিক্ষার বিকল্প নেই : প্রধানমন্ত্রী

ncitynews24.com
প্রকাশিত: সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১ | আপডেট: সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারীদের অধিকার আদায় করতে হলে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তাই নারীদের জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আজ সোমবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নারীদের একটা কথাই বলবো-নারীদের অধিকার দাও, অধিকার দাও বলে চিৎকার করা, বলা আর বক্তৃতা দেওয়া- এতে কিন্তু অধিকার আদায় হয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। অধিকার আদায়ের মত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই যোগ্যতা আসবে শিক্ষা-দীক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। যে কারণে দেশ স্বাধীন হবার পরই এদেশে নারী শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং অবৈতনিক করে দেন জাতির পিতা।’ তাঁর সরকার ২ কোটি ৫ লাখ ছেলে-মেয়েকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছে যার মধ্যে বেশির ভাগই নারী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজকে যদি গড়ে তুলতে হয় তবে, নারী-পুরুষ সকলকেই শিক্ষা দিতে হবে। যে কারণে আমরা প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’ শেখ হাসিনা অতীত স্মরণ করে বলেন, তিনি ’৯৬ সালে সরকারে এসে দেখেছেন কোন নারীই ডিসি, এসপি’র কোন পদ পেতনা, উপজেলায় কোন ইউএনও’র পদ পেতনা কিন্তু তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসা পর থেকে এখন সকল পদে নারীরা আসীন হয়েছেন। তিনি উদাহরণ দেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদীয় উপনেতা সবাই মহিলা। এটাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় অর্জন ।

তিনি বলেন, অতীতে ধর্মের নাম নিয়ে বা সামাজিকতার কথা বলে নারীকে পশ্চাৎপদ করে রাখার অপচেষ্টা সমাজ থেকে দূর হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে জীবন সংগ্রামে জয়ী নারীদের সম্মাননা দেয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ৫ জন ‘জয়িতা’কে জাতীয় পর্যায়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এবারেও ৫ জনকে জয়িতা সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন-অর্থনৈতিকভাবে সফল নারীর ক্যাটাগরিতে হাছিনা বেগম নীলা, শিক্ষা ও চাকরির সাফল্যের ক্যাটাগরিতে মিফতাহুল জান্নাত, সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে মোসাম্মাৎ হেলেন্নেছা বেগম, নির্যাতিতা-বিজয়ী নারী ক্যাটাগরিতে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা রবিজান এবং সমাজ উন্নয়নে অসমান্য অবদানের জন্য অঞ্জনা বালা বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফহিলাতুননেসা ইন্দিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে এক লাখ টাকার চেক, সম্মাননা ক্রেস্ট এবং সনদ তুলে দেন। মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুননেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। জয়িতা পদক প্রাপ্তদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন জয়িতা হাছিনা বেগম নীলা। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, পদস্থ সামারিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসের প্রতিনিধি এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা পর্বের মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরের একটি পোষাক কারখানায় নারী পোশাক শ্রমিকরা পুরুষের সমান ন্যায্য মজুরী ও দৈনিক ৮ ঘন্টা শ্রমের দাবিতে আন্দোলন করলে পুলিশ নির্যাতন চালায় এবং অনেককে গ্রেপ্তার করে। এই দাবিতে ঐ একই দিনে ১৯০৮ সালে আরো আন্দোলন-সংগ্রাম হয়। সেই দিনটিকে স্মরণ করে পরে বিভিন্ন সংস্থা ও নারী ব্যক্তিত্বের বিশেষের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। কাজী নজরুল ইসলাম-এর কবিতা নারী এর কয়েকটি পংক্তি’ বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।, তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীকে আপন ভাগ্য বিধাতা হতে হবে।

নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকারের গৃহীত পদেক্ষেপের চুম্বক অংশ তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১, নারী উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা-২০১৩-২০২৫ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ প্রণয়ন করেছে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্ম-পরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা-২০১৩, ডিএনএ আইন-২০১৪, যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭, বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা-২০১৮। মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ৬ মাসে বর্ধিতকরণসহ সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম বাধ্যতামূলক করার ও উল্লেখ করেন তিনি। অতীতে রাজশাহীতে একবার প্রমিলা ফুটবল আয়োজনে ব্যর্থ হবার কাহিনী বনর্না করে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই দেশের নারীদের পুরুষের সমান সুযোগ সৃষ্টিতে তাঁর সরকার সমর্থ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই সবক্ষেত্রে আমরা নারীদের একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি, যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরই চিন্তার ফসল। তিনি দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী সমাজ হওয়ার উল্লেখ করে বলেন, সমাজের এই অর্ধেক অংশ যদি অকেজো থাকে। সমাজটা তা হলে খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে চলবে। এ প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ’৫৪ সালের চীন সফর নিয়ে লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইয়ের কয়েকটি বিশেষ লাইন উদ্ধৃতি দেন। জাতির পিতা বলেন, ‘নয়াচীনের মেয়েরা আজকাল জমিতে, ফ্যাক্টরীতে, কল-কারখানাতে, সৈন্যবাহিনীতে দলে দলে যোগদান করছে। তাদের সংখ্যা স্থানে স্থানে শতকরা ৪০ জনের ওপরে।’ জাতির পিতা আরেক জায়গায় বলেছেন, ‘ইসলামিক ইতিহাস পড়লে জানা যায় যে, মসলমান মেয়েরা পুরুষদের সাথে যুদ্ধ ক্ষেত্রে যেত, অস্ত্র এগিয়ে দিত, আহতদের সেবা শূশ্রুশা করতো। হযরত রসুলে করিম (সা.) এর স্ত্রী হযরত আয়েশা (রা.) নিজে বক্তৃতা করতেন। দুনিয়ায় ইসলামই নারীর অধিকার দিয়েছে।’ তিনি এ সময় দেশের স্বাধীনতা অর্জনে তাঁর মা, মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মানুষ করার পাশাপাশি যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জেলে থাকতেন তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে দলের কার্যক্রম দেখা, আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা সবকিছু তিনিই করেছেন পর্দার আড়ালে থেকে, কখনও কোন প্রচার তিনি চাননি। কাজেই, আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি- তার পেছনে আমার মা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের অনেক অবদান রয়েছে।’ তাঁর মা’য়ের মতামতকে জাতির পিতা সবসময়ই অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন অর্জনের পেছনে একজন নারীর যে অবদান থাকে, সেটাই এখানে সবথেকে বড় কথা।
নারীদের অবগুন্ঠণ মুক্ত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য এ সময় উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি ।