দ্রুততম সময়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ে বিচার পাওয়া মানুষের অধিকার। মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানিমুক্ত বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করুন। কেননা খুব অল্প সময়ে, অল্প খরচে, ভোগান্তিমুক্ত বিচারপ্রাপ্তি মানুষের অধিকার। আজ বুধবার (৪ নভেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকায় নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন আদালতে ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ৯০৮টি মামলা বিচারাধীন আছে। এসব মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুততম সময়ে রায় প্রদানের উপায় বের করার জন্য আমি সব বিচারক ও আইনজীবী সবার কাছে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। এত মামলা এভাবে যেন জমে না থাকে। কীভাবে দ্রুত এসবের বিচারটা সম্পন্ন করা যায় সে ব্যাপারে একটু আন্তরিক হবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন। এর জন্য যদি কোনও রকম সহযোগিতা প্রয়োজন হয় সেটা আমরা সরকারের পক্ষ থেকে করবো। এতগুলো মামলা এভাবে পড়ে থাকুক সেটা আমরা চাই না। শেখ হাসিনা বলেন, খুব অল্প সময়ে, অল্প খরচে ভোগান্তিমুক্ত বিচারপ্রাপ্তি মানুষের অধিকার। যদি দ্রুত সময়ে, অল্প খরচে বিচার দিতে পারেন, বিচার বিভাগের ওপরই মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়বে। যদিও আমাদের সবার আস্থা-বিশ্বাস আছে। তারপরও আমি বলবো এ বিষয়ে সবাইকে একটু বিশেষ নজর দিতে। নিজেদের বিচার না পাওয়ার বঞ্চনার কথা এ সময় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা, দুই ভাই-ভাবিসহ আত্মীয়-স্বজনদের হত্যা করা হয়েছিল। তার বিচার তো করেইনি, ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের পথ বন্ধ করেছিল। বিচার চাওয়ার অধিকারও ছিল না আমাদের। আমি, আমার ছোট বোন রেহানা বিচার চাইতে পারি নাই। রেহানার পাসপোর্ট দেয়নি। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ। সেটা রিনিউ করে দেয়নি। আমাদের কিন্তু বিচারের বাণী নিভৃতে কেঁদেছে। বিচার চাইতে পারিনি। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকার তার দায়িত্ব পালন করতে সব সময় প্রস্তুত- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশেষ করে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে, আমরা যেহেতু আইন সভার সদস্য, সেখানে আইন প্রণয়ন বা আইন সংস্কার বা যেখানে যা করার দরকার সেগুলো সব আমরা করতে প্রস্তুত। সরকার হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব সে দায়িত্বও আমরা সব সময় পালন করতে প্রস্তুত। যেন বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়বিচার পায়, দেশের মানুষ ভালো থাকে, মানুষ স্বস্তিতে থাকে, শান্তিতে থাকে, নিরাপদে থাকে, উন্নত জীবন পায়। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তার পরিবারকে হত্যার বিচার চাওয়ার পথ রূদ্ধ হওয়ার পর তারা লন্ডনে গিয়ে ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর ভিত্তিতে সেখানে একটি সর্বদলীয় কমিশন গঠন করা হয়। স্যার টমাস উইলিয়ামস বাংলাদেশে আসতে চাইলেন, তাকে ভিসা দেওয়া হলো না। অবশেষে তিনি নিজে সরকার গঠন করে ইনডেমনিটি বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, এ বিচার চলার সময়েও বিএনপি বাধা দিয়েছিল। রায়ের দিন হরতাল ডেকেছিল তারা। এই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি সবার বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চান বলে উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চান তিনি। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। এ সময় ঢাকা জেলা জজশিপের বিচারক ও মহানগর জজশিপের বিচারকসহ সব ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।