ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো ঘটনা বন্ধ না করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান খামাল। তিনি বলেছেন, হরতালে জানমাল রক্ষার্থে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আজ রোববার (২৮ মার্চ) দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতার চেষ্টা করা হচ্ছে। এগুলো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত তিন দিন কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়িয়ে ভূমি অফিস, থানা, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছেন। ‘হরতাল দিয়ে ভাঙচুর করার অধিকার তো তাদের নেই। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া, বাচ্চাদের রাস্তায় নামিয়ে দেয়া, এসব অধিকার তাদের নেই। সরকার কঠোরভাবে এসব দমন করবে।’ কেন তাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ধৈর্যের সঙ্গে দেখছি। আমরা তাদের আইনের আওতায় আনব।’ ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের পর অভিযানের মুখে ঘরে ফেরা হেফাজতের হঠাৎ করে সহিংস হয়ে উঠায় কারও ইন্ধন থাকতে পারে বলেও মনে করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘বাঁশের কেল্লার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। আগে যে জঙ্গি সংগঠনগুলো ছিল, তারাও এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়গুলো দেখভাল করছে। আমরা তাদের আইনের আওতায় আনব।’ গত শুক্রবার থেকে ফেসবুকের গতি বন্ধ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টি স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘এটা যান্ত্রিক ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘তিনদিন ধরে কতিপয় উশৃঙ্খল ব্যক্তি গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মাদনায় চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর, সরাইল, আশুগঞ্জ উপজেলার সরকারি সম্পদ ধ্বংস করে চলেছে। যার মধ্যে উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন, সরকারি ভূমি অফিস, পুলিশ ফাঁড়ি, রেলস্টেশন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের বাড়িঘর, প্রেস ক্লাবসহ নানা সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করে যাচ্ছে। ‘এ জাতীয় ক্ষয়ক্ষতি, সকল প্রকার উশৃঙ্খলতা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় জনগণের জানমাল সম্পদ রক্ষায় সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল এতিম ছোট ছোট শিশুদের রাস্তায় বসিয়ে দিচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় স্বার্থ হাসিলের জন্য এই ছোট ছোট এতিম, মাদ্রাসায় যারা পড়ে তাদের সামনে রাখছে, তারাই ভিকটিম হচ্ছে।’ হেফাজতের ডাকা হরতালে রোববার (২৮ মার্চ) সকাল থেকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সড়ক বন্ধ রয়েছে। গতকাল শনিবার হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি সড়কে তোলা ইটের দেয়াল এখনও রয়েছে। এরই মধ্যে নতুন করে সড়কের দুটি স্থান খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার যাত্রীরা। যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় হেঁটে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। সাধারণ মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হাটহাজারীতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি র্যাব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। সড়কে পুলিশের সাঁজোয়া যানসহ পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি টহল দিচ্ছে। এদিকে হরতাল সমর্থনে রোববার সকাল থেকে উত্তপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আশপাশের এলাকা। শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। জেলার বিভিন্ন সড়কে আগুন জ্বালিয়ে, গাছ ও খুঁটি ফেলে অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়লে বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একইভাবে হরতালের সমর্থনে রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জে পিকেটিংয়ের সময় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গুরুতর অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।