জাতীয় উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনাদেরকে জনগণের সেবক হতে হবে। মানুষের সেবা করাই সবচেয়ে বড় বিষয়। আপনাদের সবাইকে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।’সোমবার (২২ আগস্ট) সকালে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৩তম বুনিয়াদি কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
শুরুতেই বাংলাদেশ লোক প্রশাসন কেন্দ্রসহ দেশের ৬টি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত ৭৩তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপনী এবং সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত ছিলেন সবাইকে স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ প্রজাতন্ত্রের নবীন কর্মচারীদের মধ্যে সশরীরে উপস্থিত থেকে সনদ বিতরণ করতে পারলাম না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। উপস্থিত থাকতে পারলে খুব খুশি হতাম। করোনা মহামারির কারণে আমার যাতায়াতটা একটু সীমিত হয়ে গেছে। আশা করি, ভবিষ্যতে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটবে।’অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সেবা দেয়া প্রত্যেকের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সীমিত সম্পদ কাজে লাগিয়েই দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।নবীন কর্মকর্তাদের দেশ গড়ার কারিগর উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পাপাপাশি ১০০ বছরের ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নেও মনোযোগী হতে হবে।তিনি বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়া, অসাম্প্রদায়িক চেতনা গড়ে তোলা, বিশ্বে একটা মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা, বাঙালি জাতি আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকবে–এমন স্বপ্ন দেখতেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই জাতির পিতা সবসময় বলতেন, বাংলাদেশকে তিনি সুইজারল্যান্ড অব দ্য ইস্ট হিসেবে তৈরি করবেন। কিন্তু তা আর তিনি করে যেতে পারেননি। এটা একটা বড় দুর্ভাগ্য।সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পর আমরা চেষ্টা করেছি মানুষের উন্নয়নে কী কী করা যায়। সেই প্রচেষ্টা আমাদের এখনো অব্যাহত রয়েছে। যদিও মাঝখানে ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটা সময় চলে গেছে। চরম জঙ্গিবাদের উত্থান, সন্ত্রাসের উত্থান, দুর্নীতি–এমন একটি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। বিশ্বে ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমরা সরকারে আসি। এরপর থেকেই আবার দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্ট শুরু হয়।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, ‘আমি চাই, নবীন কর্মকর্তারা মনে রাখবেন, দেশের মানুষের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করতে হবে। জাতির পিতা বলে গেছেন, আজ এ দেশে যতটুক অর্জন, তা কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে ঘাম ঝরিয়েই অর্জন। তাদের কষ্ট থেকেই তো আমাদের বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় সহযোগিতা হয়। তাহলে তাদের ভাগ্য আমরা কেন পরিবর্তন করব না! আর তারা যদি ভালো থাকে, তবে দেশের অর্থনীতি ও অগ্রগতিও হবে। এটা কেউ থামাতে পারবে না। আর সেটা চিন্তা করেই আমরা নানা পদক্ষেপ নিই।’
অনুষ্ঠানে ৬টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া নবীন কর্মকর্তাদের হাতে সদন তুলে দেয়ার পাশাপাশি শপথ গ্রহণ করেন তারা।অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম এবং বিপিএটিসির রেক্টর রামেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বক্তব্য দেন।প্রশিক্ষাণার্থীদের পক্ষে আল মাহমুদ হাসান এবং ফারজানা ইয়াসমিন বক্তব্য দেন। ৭৩তম ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্সে একটি অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়।প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন।