চাল, গম, আটা, ময়দা ও তেলসহ ৯টি নিত্যপণ্যের মূল্য এখন থেকে সরকার নির্ধারণ করে দেবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আর নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে কোনও পণ্য বিক্রি হলে সংশ্লিষ্টদের আর জরিমানা নয়, এখন থেকে সরাসরি মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি।আজ মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সকালে মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। এর আগে বাজারে পণ্যের সরবরাহ, মজুত ও আমদানি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সচিবালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, পণ্যের দাম যেটা বাড়ানো উচিত তার চেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, ট্যারিফ কমিশন এখন থেকে এসব পণ্যের যে ন্যায্য দাম হওয়া উচিত, যেভাবে ভোজ্যতেলের দাম আমরা নির্ধারণ করি তেমনিভাবে আইটেমগুলো নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে, আমদানিকারকদের সঙ্গে অথবা যারা আছেন কনসার্ন পিপল, ব্যবসায়ী নেতার এফবিসিসিআইসহ সবাইকে নিয়ে বসে যৌক্তিক যেটা সেটা ঠিক করব এবং সেটা ডিক্লারেশন করা হবে, দিস ইজ দ্যা প্রাইস। মার্কেটে এই প্রাইসে বিক্রি হতে হবে।এর চেয়ে বেশি নিলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি। এর চেয়ে বেশি যদি কেউ নেয় সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা নয় আমরা ঠিক করেছি যে আমাদের দুইটা অরগানাইজেশন আছে ভোক্তা অধিকার এবং প্রতিযোগিতা কমিশন, আমরা সোজাসুজি মামলায় চলে যাব এবং আইন আছে তিন বছরের জেল বা কোথাও কোথাও তার চেয়ে বেশি জরিমানা, সেই পদক্ষেপ আমরা নিতে যাব, যা যা আমাদের ক্ষমতা আছে। এটা শুরু হবে ইমিডিয়েটলি। আজকে ওনাকে (ট্যারিফ কমিশনের কর্তৃপক্ষ) বলা হয়েছে, সব আইটেমগুলো ১৫ দিনের মধ্যে ক্যালকুলেশন করে এটা বাজারে ডিক্লেয়ার করে দেওয়া হবে, দিস ইজ দ্যা প্রাইস, বলেন মন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যদি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আমাদের নির্ভর করতে হয় তাহলে কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের দাম উঠলে পরে এখানেও দাম বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে সেটাও কতটুকু বৃদ্ধি পাওয়া উচিত তা ঠিক করে দেওয়া হবে। এখন কথা আসছে বিভিন্নভাবে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসের দাম কমেছে। হ্যাঁ সত্যি কথাই কমেছে। আমরা সয়াবিন তেলের দাম পামওয়েলের দাম কমতে দেখেছি। কিন্তু পাশাপাশি যেটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক যে ডলারের দাম (রেট) বেড়ে গেছে। যে কারণে এই দুটো হিসেব করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, যে সুফলটা আমরা পেতে পারতাম, আমাদের জনগণ পেতে পারত সেটা পাচ্ছি না। আমরা ক্লোজ মনিটর করে দেখব যে, হোয়াট ইজ দ্যা রাইট প্রাইস, সেটাই আমরা ডিক্লেয়ার করব।তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের উচ্চমূল্য, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেওয়াসহ সার্বিক ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সাধারণত আমাদের ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেল নিয়ে টাইম টু টাইম বসে ঠিক করে। বাড়ানোর দরকার হলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বাড়ায়। আবার যখন দাম কমে আন্তর্জাতিক বাজারে এবং বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়া উচিত সেক্ষেত্রে কমিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি যে বিভিন্ন আইটেমের দাম বেড়েছে, যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও সবগুলোই আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেখার কথা ছিল তা কিন্তু নয়। কৃষিপণ্যের ব্যাপারগুলো রয়েছে, চালের ব্যাপার রয়েছে, যেটা খাদ্য মন্ত্রণালয় বা কৃষি মন্ত্রণালয় তারা দেখবে। ডিমের কথা আসছে মাঝখানে। ডিমের কথা আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আনিনি। আমাদের দেখার ব্যাপারও ছিল না। তারপরেও প্রশ্ন আসার পরে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল, ডিম দরকার হলে আমদানি করব। পরবর্তী পর্যায়ে ডিমের দাম কমেছে।তিনি বলেন, আজকে বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কীভাবে এটাকে কমানো যায় অথবা যথার্থ করা যায়। কমানো বলতে অনেক সময় আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে আমরা কমাতে পারব না, কমানো সম্ভব হবে না। তবে যেটা হওয়া উচিত, তার চেয়ে বেশি দামে যেন ভোক্তাদের কিনতে না হয়, সেজন্য আমরা কিছু বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এ সময় বাণিজ্য সচিব, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতিও উপস্থিত ছিলেন।