করোনার কারণে স্কুল খুলতে পারছি না : প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল খুলতে পারছি না। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না। এটা বাচ্চাদের জন্য সত্যিই খুব কষ্টের। কারণ ঘরের মধ্যে বসে থেকে কী করবে তারা?’
আজ সোমবার (৫ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস এবং শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২০ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিচ্ছি। যেকোনো ধরনের শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে যাতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া যায় আমরা সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার চায় শিশুরা নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকুক, সুন্দর জীবন হোক এবং ভালো মানুষ হয়ে উঠুক। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংসতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো শিশুর মৃত্যু আমাকে সাংঘাতিকভাবে নাড়া দেয়… সেটি আমাদের দেশে ঘটুক বা বিদেশে। এ ধরনের প্রতিটি ঘটনা আমাকে কষ্ট দেয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি চান এই পৃথিবী শিশুদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য, বাসযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ জায়গা হোক, যেখানে তাদের প্রত্যেকেরই উজ্জ্বল ভবিষ্যত হবে। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিশুদের দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। ‘শিশুদের প্রতিভা, জ্ঞান এবং বুদ্ধি বাড়ার সুযোগ আমাদের দিতে হবে। তাদের পড়াশোনা এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমেই এটি সম্ভব। এটি শিশুদের জন্য একটি উন্নত জীবন নিশ্চিত করবে যা তাদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যত তৈরি করবে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশের স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় শিশুরা খুব খারাপ দিন পার করছে। এটি তাদের জন্য খুব কষ্টের। প্রধানমন্ত্রী বাবা-মা এবং অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান, তারা যেন শিশুদের অন্তত এক ঘণ্টার জন্য হলেও বাড়ির বাইরে নিয়ে যান যেখানে শিশুরা খেলতে পারে। ‘এটি তাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজন। আমাদের সকলকে শিশুদের সুস্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা বজায় রাখতে হবে,’ বলেন তিনি। মহামারি চলাকালে যেন স্কুলের একাডেমিক কার্যক্রম চালানো যায় সেজন্য সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য টিভি ও অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি এবং অভিভাবকদেরও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘শিশুদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পড়াশোনা, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ খুব প্রয়োজন। পড়াশোনার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে কারণ শিক্ষা ব্যতীত কেউ দেশের জন্য অবদান রাখতে পারে না।’। দেশের প্রতিটি উপজেলায় শিশুদের জন্য মিনি স্টেডিয়াম করে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজের কোনো স্তরের কেউ যেন বাদ না পড়ে সে জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বৃত্তি আমরা দিচ্ছি। করোনার মধ্যেও বৃত্তি উপবৃত্তি পৌঁছে দিচ্ছি। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করে দিচ্ছি। সাংস্কৃতিক চর্চা, খেলাধুলার জন্য আমরা প্রত্যেকটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছি। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও কাজ করছি। নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণের দিকে আমরা বিশেষ নজর দিয়েছি। খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং স্কুলে ঝরে পড়া বন্ধে ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। যাতে তারা স্কুলে থাকে।’ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রতিও নজর দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের চিকিৎসা, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং এমনকি যারা চোখে দেখতে পারে না তাদের জন্য ব্রেইল বই দিচ্ছি। প্রাক প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আমরা বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। শারীরিক অসুবিধা থাকলে তারা যেন কারো বোঝা হয়ে না থাকে সেই জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি। আমাদের এই শিশুরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভালো করছে। বিশেষ অলিম্পিকে প্রতিবন্ধী শিশুরাই স্বর্ণ জয় করে এনেছে। তারা ২১টি স্বর্ণসহ ৭১টা ট্রফি নিয়ে আসতে পেরেছে। তাদের যে মেধা তা বিকাশে বিশেষ একাডেমি করে দিচ্ছি আমরা।’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। অফিসার ইনচার্জ ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ভীরা মেন্ডনকা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকি ইনাম ও শিশু একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী রিদিতা নূর সিদ্দিকী এবং নাভিদ রহমান তূর্য অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।