পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদযাপন শুরু হয়েছে। সেই সময়ের চরম দারিদ্র বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে চলছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এশিয়ালিস্টের লেখক ওলিভায়ার গিলার্ড বলেছেন, উন্নয়নের হিসেবে বর্তমানে ইসলামাবাদের চেয়ে অনেক ওপরে ঢাকার অবস্থান। বাংলাদেশে বর্তমানে স্থিতিশীল বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের ফলও ভোগ করছে ঢাকা। কিন্তু যে দেশটির সঙ্গে লড়াই করে একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ; সেই পাকিস্তানে বারবার ফিরছে সামরিক সরকার।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মাঝে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সেতুর উদ্বোধন করেছেন। চট্টগ্রাম এবং ত্রিপুরার মাঝে সংযোগস্থাপনকারী এই সেতু ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে আংশিকভাবে উন্মুক্ত করবে। ভারতের পররাষ্ট্রনীতির দর্শন ‘প্রতিবেশী প্রথম’ প্রতিষ্ঠার পর থেকে একই ধাঁচের দুই দেশের সরকার প্রধানের নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে; যা আঞ্চলিক দৃশ্যের ক্ষেত্রেও বিরল। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফর করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার এই সফর বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে। গিলার্ড লিখেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে নয়াদিল্লি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো, গত বছরের শেষের দিকে দুই দেশের মাঝে পঞ্চম রেল সংযোগ চালু। অন্যদিকে, পাকিস্তানে বারবার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটলেও বাংলাদেশে বেসামরিক সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ২০২০ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক যে চিত্র প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। এই তালিকায় পাকিস্তানের অবস্থান ৪৩তম। মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩তম হলেও পাকিস্তান ১৫৪তম। পাকিস্তানের প্রথম সারির একটি দৈনিকের একজন কলাম লেখকের বরাত দিয়ে গিলার্ড লিখেছেন, বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় ২ হাজার মার্কিন ডলারের ওপরে; যেখানে পাকিস্তানের এই আয় মাত্র ১ হাজার ১৩০ ডলার। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা সুবিধা পাওয়ার হার ৯৮ শতাংশ হলেও পাকিস্তানে সেই হার ৭২ শতাংশ। এছাড়া বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার হাজারে মাত্র ২৫ জন হলেও পাকিস্তানে তা ৫৯।