ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না বরং মানবাধিকারের সুরক্ষা দেয় বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ দেশের সমস্যা সমাধান করে এবং মানুষের জন্য কাজ করে বলেও জানান তিনি।
আজ বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে। শুধু বেঁচে থাকাই তো মানবাধিকার না। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি। আমরা বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি, স্বল্পমূল্যে দিচ্ছি। বিনা পয়সায় করোনা ভ্যাকসিন দিয়েছি, ওষুধ দিয়েছি, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানুষের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করেছি। দেশের গড় আয়ু বাড়িয়েছি। মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছি। এমন কোনো নদী নেই যার ওপর ব্রিজ করিনি।’এ সময় সরকারপ্রধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র খুনিদের মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয়। অথচ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে দিতে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও দেশটি তাতে সায় দেয়নি। দেশে গুম-খুনের সংস্কৃতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান শুরু করেন বলেও অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।শেখ হাসিনা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান গণ্ডগোল লাগিয়ে রেখেছিল। আমরা সেখানে শান্তিচুক্তি করি। সেই শান্তিচুক্তিতেও বাধা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। সে দিন হরতালও করেছে। ১৮০০ লোক সেদিন আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে। আমরা তাদের পুনর্বাসন করেছি।’
দেশবাসীর প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের সর্বনাশটা কী করলাম। খাদ্যের উৎপাদন বাড়ালে সর্বনাশ হয়ে গেল। তবে হতে পারে, যাদের আত্মসম্মানবোধ নেই তাদের কাছে। আমরা যখন দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘোষণা করি তখন বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিল, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। তাদের নীতি হলো বিদেশ থেকে ভিক্ষা আনা। আত্মসম্মানবোধ নিয়ে দেশ দাঁড়াক সেটা তারা চায় না।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আমরা যখন এই প্রকল্প হাতে নিই তখন এটা নিয়ে কত কথা। আজ তো এটার সুফল সবাই লাভ করছে।’এ সময় তিনি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, তিনি এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে আজ দণ্ডিত। সেই মামলা কিন্তু আমরা দিইনি। দিয়েছে খালেদা জিয়ার প্রিয় মঈন উদ্দীন, ফখরুদ্দীন, ইয়াজউদ্দীনরা।’
বিএনপি বুদ্ধিজীবীদের প্রতি কোনো সম্মান জানাতে জানে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীদের প্রতি তাদের সম্মান আসবে কেমনে, এইট পাস আর মেট্রিক পাস। সুতরাং সম্মান আসবে কীভাবে। আমরা জ্ঞানী-গুণীদের প্রতি সম্মান জানাই। তাদের পরিবারের প্রতি সম্মান জানাই। যারা বাংলাদেশকে বুদ্ধিজীবীশূন্য করেছিল তারা আজ ব্যর্থ হয়েছে।’এ সময় তিনি পদ্মা সেতু নিয়ে খালেদা জিয়ার বিরূপ মন্তব্যের সমালোচনা করেন। বিএনপি নেতারা কীভাবে পদ্মা সেতুতে চড়েন, তাদের কি লজ্জা হয় না সেই প্রশ্নও রাখেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে তার সরকার কাজ করছে। করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি সরকার ধরে রেখেছে বলে জানান তিনি।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ। সভাটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।