নারায়ণগঞ্জে চাষাঢ়ায় হকার ইস্যু নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনায় অস্ত্রধারী নিয়াজুলের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় বিস্মিত হয়েছেন বন্দর পৌর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ২২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম।তিনি জানান, আমি নারায়ণগঞ্জে কোন বলয়ে রাজনীতি করি না, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী জননেত্রী শেখ হাসিনার সৈনিক। নারায়ণগঞ্জ চাষাড়ায় হকার ইস্যু নিয়ে যে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে তা নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের শক্তি অগ্রযাত্রাকে ধ্বংস করার পায়তারা করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি। ২০১৮ সালের ১৬ ই জানুয়ারি আমি নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়ায় আসেনি কিন্তু তারপরও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে ৭ নং বিবাদী করে অস্ত্রধারী নিয়াজুল একটি মামলা দায়ের করেছে বলে আমি হতবাক।আমি সেদিন ঘটনার সময় বন্দরে ছিলাম, ঘটনাস্থলেই গেলাম না অথচ আমার বিরুদ্ধে করা হলো মিথ্যা মামলা।
আমি ও আমার পরিবার রাজনীতির শুরু থেকেই আওয়ামীলীগের পাশে থেকে রাজপথে সব সময় থেকেছি। রাজনীতিতে আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য রয়েছে,১৯৫৩ সালে সর্বপ্রথম নারায়ণগঞ্জ সদরের গোগনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন আমার পিতা এবিএম সিরাজুল ইসলাম, তখন গোগনগর ও আলীরটেক মিলে ছিলো একটি ইউনিয়ন যা ছিল গোগনগর ইউনিয়ন।
এর পর এ বি এম সিরাজুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শীতলক্ষ্যা কুমুদীনী মাঠে একটি সভা করেন সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন এ বি এম সিরাজুল ইসলাম। নারায়ণগঞ্জ মহাকুমা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন আমাদের পরিবার থেকে ৫ জন।
আমার বড় ভাই এ বি এম নজরুল ইসলাম ২০০১ সালের ১৬ই জুন সদর থানা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন চাষাড়া বোমা হামলায় নিহত হন। এর পর পরই এই বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি ঝুলন্ত অবস্থায় চলে যায় বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সিরাজুল ইসলাম ছেলে সাবেক বন্দর পৌর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম জানান, আমাদের পরিবার আওয়ামী লীগ করার কারনে নারায়নগঞ্জ ৫ সদর-বন্দর) এলাকায় অনেক নির্যাতিত ও নিপীড়ন এর শিকার হয়েছি। নারায়ণগঞ্জ সদর-বন্দর থানায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি যারা করত কিংবা যারা দেশের দুঃসময়ে শেখ হাসিনা সরকারকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল,মাঠে আন্দোলন সংগ্রাম করতো আওয়ামীলীগের জন্য তাদেরকে টার্গেট করে একে একে মারধর সহ বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট শুরু করে বিএনপির ক্যাডার ও তৎকালীন জেলা ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সর্ব প্রথম সদর থানার গোগনগর ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকায় অবস্থিত মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম সিরাজুল ইসলাম এর বাড়িতে হামলা ভাংচুর লুটপাট ও ককটেল বিষ্ফোরন ঘটানো হয়। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক নারায়ণগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম এর বাড়িতে তার ছেলে বর্তমানে গোগনগর ইউনিয়ন আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম, গোগনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কবিরুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা ছগিরুল ইসলাম ও সফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম কে লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি, ককটেল ছুঁড়ে। অল্পের জন্য ককটেল লক্ষ্য ভ্রষ্ট হলে প্রানে বেঁচে যান তখন সাইফুল ইসলাম। ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় বাড়িঘরের আসবাবপত্র ও টিভি, ফ্রিজ লুটকরা হয় স্বর্নের গহনা সমূহ। তখন এই ঘটনায় মামলা হলেও তেমন কোন সুরাহা পায়নি রক্তের সাথে মিশে থাকা আওয়ামী লীগের এই পরিবারটি। এর পরও থেমে থাকেনি বিএনপির সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগ করার কারনে হামলা চালায় একের পর এক এই পরিবারের লোকজন ও আত্মীয় স্বজনের বাসায়। তাাাাাই সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন এরকম একটি মিথ্যা মামলা আমার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আমি সত্যিই হতবাক হয়েছি। আমি চাই প্রশাসন যেন যেন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা যেন উন্মোচিত করেন।
কে এই নিয়াজুল :
নিয়াজুল ইসলাম খান রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ১৯৮৬ সাল থেকে রাজনীতির মাঠে শামীম ওসমানের বলয়ে থেকে মূলত রাজনীতি শুরু করেন বলে জানা যায়। এরপর ১৯৮৮ সালে জোড়া খুনের (কামাল ও কালাম)মামলার আসামি হন নিয়াজুল। ১৯৯৬ সালে অস্ত্রের লাইসেন্স পায় নিয়াজুল। এরপর নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে চলাফেরা করতো সে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে এলজিইডির ঠিকাদারি ব্যবসার অনেকটা নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে।
এছাড়া গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা ও ভূমিদস্যুতাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিয়াজুলের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা যায়। নগরীর চাঁদমারীতে সেনাবাহিনীর জায়গার গড়ে ওঠা বস্তিও নিয়ন্ত্রণ করতো নিয়াজুল। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় (ওয়ান ইলেভেন) বস্তি উচ্ছেদ করে ওই জায়গা নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনী।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নিয়াজুলের বড় ভাই একাধিক মামলার আসামি সন্ত্রাসী সুইট র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়। ওই সরকারের আমলেই তাদের আত্মীয় যুবদল নেতা মমিনউল্লাহ ডেভিডও নিহত হয় র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’। ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষ হলে নারায়ণগঞ্জের অন্য চিহ্নিত সন্ত্রাসীর মতো নিয়াজুলও পালিয়ে যায় ভারতে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে ফেরে সে।
দেশে ফিরে নগরীর উত্তর চাষাঢ়া এলাকায় নিজের বাড়ির নিচে ও রেললাইন এলাকায় গোডাউন নিয়ে ঝুট ব্যবসা করে আসছিল নিয়াজুল। এছাড়া শহরের শিবু মার্কেট এলাকায় তার একটি বহুতল মার্কেট রয়েছে।